কানাডায় বসবাসরত ২০ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকের মধ্যে ৮ লাখ শিখ। কানাডার জাস্টিন ট্রুডো সরকারে শিখদের অবস্থান শক্ত। হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত বলে ট্রুডো যে অভিযোগ এনেছেন, এখন সেটা তাঁকে প্রমাণ করতে হবে। আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও প্রমাণ করতে হবে, এতে তাঁদের হাত নেই। তাঁদের কূটনৈতিক অচলাবস্থায় দোলাচলে পশ্চিমা বিশ্বও।
৪০ বছর পর খালিস্তানি আন্দোলন ভারত ও কানাডার আপাতনিরীহ সম্পর্কে এমন সংকট সৃষ্টি করবে, কেউ ভাবেনি। খালিস্তানের প্রশ্ন ঘিরে সম্পর্কটা যে শুধু এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। পশ্চিমা দুনিয়া দোলাচলে। একদিকে তাদের স্বাভাবিক মিত্র কানাডা, অন্যদিকে এশিয়ার নতুন সূর্য ভারত, চীনা আধিপত্যবাদের চ্যালেঞ্জার। তাদের কাছে ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ হাল।
হঠাৎ কী হয়েছে, তা সবার জানা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জি-২০ সম্মেলন থেকে ফিরে দেশের পার্লামেন্টে ভারতের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে বলেছেন, তাঁর দেশের নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যায় ভারত জড়িত। তাঁর সরকারের কাছে এ বিষয়ে ‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ’ রয়েছে। এ ঘটনায় বিদেশি হাত প্রমাণিত হলে তা হবে কানাডার ‘সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন এবং সেই কাজ অসমর্থনীয়’। ট্রুডো জানান, জি-২০-এর অবসরে বিষয়টি তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানিয়েছিলেন। গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন।
ট্রুডো যা বলেছেন, তা ওই দেশের ‘খালিস্তানপন্থী উগ্রবাদীদেরও’ বক্তব্য। নিজ্জর হত্যার কিছুদিন পর থেকেই তাঁরা এ অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। প্রচারও চালাচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সেই অভিযোগ তোলায় ভারত ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। সময় নষ্ট না করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অভিযোগ ‘উদ্ভট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। নিছক রাজনীতিই ওই অভিযোগের ভিত।
নিজ্জর কে ও কী তাঁর পরিচয়, ট্রুডো তা বলেননি। স্রেফ কানাডার নাগরিক বলে পরিচয় দিয়েছেন। নিজ্জর যে ভারতে ঘোষিত এক সন্ত্রাসবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তানি আন্দোলনের নেতা, কানাডার খালিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান, ভারতে তাঁর মাথার দাম ১০ লাখ রুপি, সেসব বিষয় ট্রুডো উল্লেখ করেননি। অভিযোগের সমর্থনে কানাডার কাছে যা তথ্য রয়েছে, ভারত তা দাখিল করতে বলেছে। কিন্তু কানাডা আজও তা দেয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, হাতে ‘প্রমাণ’ থাকার দাবিও ট্রুডো জানাননি। শুধু বলেছেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ’ রয়েছে। অভিযোগ ও প্রমাণ এক কথা নয়।
অকাট্য প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও কানাডা কেন এভাবে আগ বাড়িয়ে খেলল? ভারতকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাল? ভারতের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ দিতে না পারলে কিল হজমের উপায় থাকবে না, মুখ ও মান রক্ষা কঠিন হবে জেনেও ট্রুডো কেন এমন করলেন? কী সেই তাড়না? বিশেষ করে যখন তাঁর বিবৃতিতেই স্পষ্ট যে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি?
এসব প্রশ্নের কোনো ব্যাখ্যা কোথাও নেই। যদিও প্রাথমিক একটা উত্তর ভারত দিয়েছে। বলেছে, কারণটি রাজনৈতিক। পক্ষপাতদুষ্ট। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় ভারত অবশ্যই যায়নি, যেহেতু সবারই জানা জগমিত সিংয়ের নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির ২৪ জন সাংসদ সমর্থন তুলে নিলে ট্রুডোর লিবারেল পার্টির সরকার অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। ভারতের চোখে জগমিত সিং খালিস্তানের ঘোরতর সমর্থক। তাঁর দল কানাডার খালিস্তানিদের ‘রাজনৈতিক শাখা’।
রাজনৈতিক কারণটি যে নেহাত অমূলক নয়, তার প্রমাণ সাম্প্রতিকতম এক সমীক্ষা। কানাডাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল নিউজ’ জানিয়েছে, সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী বিরোধী রক্ষণশীল নেতা পিয়েরে পয়লিভার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রুডোকে ৯ শতাংশ ভোটে পিছিয়ে দিয়েছেন। কানাডার ৪০ শতাংশ মানুষ পিয়েরে পয়লিভারকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পছন্দ করছেন। জাস্টিন ট্রুডোকে পছন্দ ৩১ শতাংশের। সে দেশের সংসদীয় নির্বাচন ২০২৫ সালে। সম্ভবত ট্রুডো তাই আগেভাগে কোমর কষছেন।
কানাডায় প্রায় ২০ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূতের বসবাস। এঁদের মধ্যে শিখদের সংখ্যা কমবেশি ৮ লাখ। ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, কানাডায় বসবাসকারী শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে খালিস্তানপন্থীদের উপস্থিতি বড়জোর ১ শতাংশ। ৮ হাজারের মতো। শতাংশের হিসাবে নগণ্য হলেও সংখ্যাটি কম নয়। এই বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্রপন্থীরাই সে দেশের ১৫টির মতো গুরুদ্বারের নিয়ন্ত্রক। তাঁরা সরব। সদা সক্রিয়। মনে করেন, তাঁরাই শিখ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।
নরেন্দ্র মোদিকে ট্রুডো বলেছেন, সামান্য কয়েকজনের জন্য গোটা সম্প্রদায়কে দোষারোপ করা চলে না। ঠিকই বলেছেন। কিন্তু সেই সামান্য কয়েকজনের রাশ টানতে তাঁর যে ঘোর অনীহা! বারবার বলা সত্ত্বেও একজনের বিরুদ্ধেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি! নিজ্জর হত্যার পর সে দেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় ভার্মা ও কনস্যুলার জেনারেল অপূর্ব শ্রীবাস্তবের ছবি দিয়ে পোস্টার বানিয়ে ‘শিখস ফর জাস্টিস’ সংগঠন বদলার হাঁক দিলেও ট্রুডো প্রশাসন নির্বিকার থেকেছে। সরকারের সমর্থক খালিস্তানিদের আধিপত্য এভাবে ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তাঁরাই হয়ে গেছেন শিখ-সমাজের প্রবক্তা! আইনের শাসনের এমন নমুনা কানাডায় কল্পনাতীত।
খালিস্তানিদের ডেরা হিসেবে কানাডার নামডাক খুব পুরোনো নয়। কিন্তু আজ তা ভারতের চোখে খালিস্তানিদের ‘সেফ হেভেন’ বা স্বর্গরাজ্য। যে বিশেষণ এত দিন স্রেফ পাকিস্তানের ছিল, ভারত এই প্রথম তা ব্যবহার করল কানাডার জন্য! ট্রুডো প্রশাসনের ওপর মোদি সরকার কতটা ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত, এই শব্দবন্ধ তারই প্রমাণ।
কানাডা কীভাবে খালিস্তানিদের এমন স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠল, তার একটা ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট আছে। স্বাধীন ভারতে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও ইন্দিরা গান্ধীর উদ্যোগে কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন সবুজ (কৃষি) বিপ্লব এনেছিলেন। এতে সবচেয়ে লাভবান হয়েছিল পাঞ্জাব ও হরিয়ানা।
অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে সত্তরের দশকের শেষাশেষি কৃষিবিপ্লবের সুফল কমতে শুরু করায় জন্ম নেয় ছদ্মবেকারত্ব। তা থেকে হতাশা। দেখা দেয় আর্থসামাজিক অসন্তোষ। সে আগুনে ধুনো দেন পাকিস্তানের সেনাশাসক জিয়াউল হক। ১৯৮০ সালের এপ্রিলে প্রথম ঘোষণা হয় স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তানের। শুরু হয় উগ্রপন্থীদের দাপাদাপি। ১৯৮৪ সালে শুরু হয় ‘অপারেশন ব্লু-স্টার’। অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির চত্বরে ঘাঁটি গাড়া জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালেসহ শিখ জঙ্গিদের নির্মূল করার মধ্য দিয়ে সে অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছিল।
ভারতের পারমাণবিক বোমায় শক্তিধর হয়ে ওঠার পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল কানাডা। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী ও ১৯৯৮ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ী পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর পর তাঁরাই ছিল সবচেয়ে সরব। ভারতকে ইউরেনিয়াম সরবরাহ না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রভাবিত করেছিল। জাস্টিন ট্রুডোর মতো একটা সময় তাঁর বাবা পিয়েরে ট্রুডোও শিখ সন্ত্রাসবাদীর ঢাল হয়েছিলেন। পারিবারিক ঐতিহ্য অব্যাহত।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো যাঁকে রক্ষা করেছিলেন, তাঁর নাম তালবিন্দর সিং পারমার। তিনি ছিলেন ১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার ‘কণিষ্ক’ উড়োজাহাজে বিস্ফোরণের মাথা। সেই বিস্ফোরণে ৩২৯ জন নিরপরাধ যাত্রী নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে ২২৯ জন ছিলেন কানাডার নাগরিক।
পারমার ছিলেন শিখ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বাব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮১ সালে পাঞ্জাবে দুজন পুলিশ কর্তাকে খুন করে তিনি ভারত ছাড়েন। পরে কানাডায় চলে যান। ১৯৮২ সালে তাঁকে ভারতে প্রত্যর্পণের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অনুরোধ জানিয়েছিলেন পিয়েরে ট্রুডোকে। কিন্তু প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকা সত্ত্বেও পারমারকে ভারতের হাতে তুলে দিতে সিনিয়র ট্রুডো রাজি হননি।
কানাডার সাংবাদিক টেরি মিলেউস্কি তাঁর লেখা ব্লাড ফর ব্লাড বইয়ে সে ঘটনার উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘খালিস্তানি জঙ্গিদের লালন-পালনের ক্ষেত্র হিসেবে কানাডা কখনোই পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনীয় নয়। কিন্তু এটাও ঠিক, কানাডা তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় ও আইনি প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে।
পারমারকে ফেরত চেয়ে ইন্দিরা গান্ধীর অনুরোধ না রাখার পেছনে পিয়েরে ট্রুডো এক অদ্ভুত যুক্তি দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ব্রিটেনের রানির প্রতি ভারত পর্যাপ্ত শ্রদ্ধাশীল নয়। তাই কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকা সত্ত্বেও ভারতের ক্ষেত্রে তা বলবৎ হবে না। কারণ, রানিকে কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে মানলেও ভারত তাঁকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে মানে না।’
সেই পারমার ১৯৮৪ সালে কানাডায় হিন্দুনিধনের ডাক দিয়েছিলেন; বিমান ধ্বংসের আভাস দিয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে ‘কণিষ্ক’তে বিস্ফোরণ ঘটানোর মধ্য দিয়ে তা করেও দেখান। কানাডার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা সেই পারমার ১৯৯০-এর দশকে পাঞ্জাবে ফিরে এসেছিলেন। হয়তো নিয়তির হাতছানিতেই। ১৯৯২ সালে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হয়।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সরকারি অবস্থান ১৯৮০-এর দশক থেকেই অপরিবর্তিত। বিশ্বপটভূমিতে তা নিতান্তই পাকিস্তানকেন্দ্রিক। ভারত সব সময় সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে চেয়েছে। এই প্রথম সেই চৌহদ্দি পেরিয়ে তা পশ্চিম গোলার্ধে পাড়ি দিল। পার্থক্যও প্রবল। এত দিন ভারত ‘ভিকটিম কার্ড’ খেলেছে। এই প্রথম অন্য কোনো দেশ ভারতের বিরুদ্ধে সেই কার্ড খেলল। ভারতকে দাঁড় করাল অপরাধীর কাঠগড়ায়!
ট্রুডোর পক্ষে এটা যতটা মানরক্ষার বিষয়, ততটাই চ্যালেঞ্জ মোদিরও। ট্রুডোকে প্রমাণ দিতে হবে ভারতের হাত থাকার, মোদিকে প্রমাণ করতে হবে ভারত নির্দোষ। দুই প্রধানমন্ত্রীই হাঁটছেন সরু সুতোর ওপর। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
খালিস্তানিদের প্রতি ট্রুডোর নমনীয়তার নতুন কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই। তা প্রায় সর্বজনবিদিত। কিন্তু অন্য একটি প্রচারের মোকাবিলাও তাঁকে করতে হচ্ছে। কানাডার রাজনীতিতে খালিস্তানিদের রমরমার পাশাপাশি চীনের আগ্রহ, বিশেষ করে তাদের নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা নিয়ে জল ঘোলা কম হচ্ছে না। রাজনৈতিক ঝুঁকি ট্রুডোর অনেক বেশি।
ঝুঁকি মোদিরও কম নয়। ট্রুডোর অভিযোগ এমন একটা সময়, যখন জি-২০-এর সাফল্য নিয়ে ভারত গদগদ, নরেন্দ্র মোদি ‘বিশ্বগুরু’-র শিরোপা পেতে উন্মুখ অথচ এই প্রথম ভালো রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ পরিস্থিতিতে ট্রুডোর অভিযোগ সত্য প্রতিপন্ন হলে বৈশ্বিক দুনিয়ায় মোদির অবস্থান নড়বড়ে হতে বাধ্য। নির্বাচনের মুখে সেই হুমকি বাড়তে না দিয়ে ভারত আক্রমণাত্মক হয়েছে। কূটনীতিক বহিষ্কার, ভিসা বন্ধ, দূতাবাসের কর্মিসংখ্যা কমানোর নির্দেশ এবং অভিযোগের প্রমাণ দাখিলের দাবি জানিয়েছে। মোদি-জমানায় নিঃসন্দেহে এমন গুরুতর অভিযোগ, তা-ও আবার সন্ত্রাসবাদ ঘিরে, এর আগে ভারতের বিরুদ্ধে ওঠেনি।
কূটনৈতিক অচলাবস্থা ভারতের দিক থেকে এই প্রথম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হয়েছিল ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে নিয়ে, নাবিকদের নিয়ে ইতালির সঙ্গে, এক শিশুর তদারকি নিয়ে নরওয়ের সঙ্গে, পুরুলিয়ায় অস্ত্র ফেলা নিয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে। কিন্তু চরিত্রগত দিক থেকে এমন গুরুতর সংকট এই প্রথম।
কানাডায় ভারতীয় পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। ঘোর অনিশ্চয়তায় তারা। ভারতে পেনশন তহবিলে কানাডার বেসরকারি লগ্নি প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলার। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ (পণ্য ও পরিষেবা নিয়ে) প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। বছরে ৮০ হাজার পর্যটক কানাডা থেকে ভারতে আসেন। ১২ বছর ধরে আলোচনার পর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ার মুখে এসে বন্ধ হয়ে গেল। দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে হিন্দুদের কানাডা ছাড়তে হুমকি। সম্পর্ক ঘিরে এই অনিশ্চয়তা কবে কাটবে, তা কেউ জানা না।
অনিশ্চয়তা বৈশ্বিক জোটেও। স্বাভাবিক মিত্র কানাডা ও পরম মিত্র হতে চলা ভারতের মধ্যে কোনো একজনকে বেছে নেওয়া পশ্চিমের শক্তিধরদের পক্ষে কঠিন। দুজনকেই তাদের প্রয়োজন। কিন্তু খালিস্তান নিয়ে কীভাবে দুজনের দূরত্ব ঘুচবে, কারও জানা নেই। আপাতত সবার নজর প্রমাণের দিকে।