তৃণমূল কংগ্রেসের দুই হেভিওয়েট নেতাকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে ভারতের দুটি কেন্দ্রীয় সংস্থা। এতে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দলটির জনপ্রিয়তায় কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। এত দিন বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে অবশেষে মুখ খুলেছেন তিনি। মমতা বলেছেন, ২০২৪ সালের পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা না থাকায় এবার কেন্দ্রীয় সংস্থার মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে বিজেপি।
মমতা বলেছেন, বিরোধীদের লম্ফজম্ফে লাভ নেই। মানুষ মমতার পাশেই আছে। ২০২৪ সালে বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদি আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। তাই বিজেপি এখন বেছে বেছে মমতার দলের নেতাদের হেনস্তা করছে। তাতেও বিজেপি পার পাবে না। মানুষ বুঝতে পেরেছে এসব বিজেপির চক্রান্ত।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে ভয় দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পার পাবে না বিজেপি। তাদের পরাজয় বরণ করতে হবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে।
গতকাল রোববার কলকাতার বেহালায় আয়োজিত এক সভামঞ্চ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বেছে বেছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের হেনস্তা করা হচ্ছে।
তৃণমূলের মুখ বন্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিজেপি। এতে তৃণমূল বিন্দুমাত্র বিচলিত নয়। মরব তবু ভয় পাব না। পারলে আমার বাড়িতেও কেন্দ্রীয় সংস্থা আনুক। বিচার হবে জনতার দরবারে।’ এরপরে মমতা জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘আমার জন্য পথে নামবেন তো?’ তখন সমবেত কণ্ঠে জবাব আসে নামব।
দুর্নীতির অভিযোগে ২৩ জুলাই কলকাতার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার হন সাবেক শিক্ষা এবং শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ভারতে আর্থিক অনিয়মের তদন্তকারী কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পার্থর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে স্কুলশিক্ষক নিয়োগে তিনি কোটি কোটি রুপি ঘুষ নিয়েছেন। তাঁর সহযোগী অর্পিতা মুখার্জির দুটি ফ্ল্যাট থেকে ৫০ কোটি রুপি, সোনা, বিদেশি মুদ্রা জব্দ করে ইডি। পার্থ এখন আছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে। আর অর্পিতা মুখার্জি ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়ে এখন আছেন কলকাতার আলিপুরের নারী কারাগারে।
এরপর গত বৃহস্পতিবার বীরভূমের বোলপুরের বাসভবন থেকে ভারতের আরেক কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সীমান্তে গরু পাচার মামলায় জড়িত।
দুর্নীতির এসব ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর বিপাকে পড়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার অনুব্রত মন্ডলের গ্রেপ্তারের পর কার্যত মুখ বন্ধ হয়ে যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতার। বিরোধী দলও এই ঘটনায় মমতার বিবৃতি প্রদানের দাবি তোলে।
মমতা বলেন, ‘কী করেছে অনুব্রত? কিছু কি প্রমাণ পেয়েছে? সে কখনো এমপি বা এমএলএ হতে চায়নি। ওকে আমি রাজ্যসভায় পাঠাতে চেয়েছিলাম। তবে সে রাজি হয়নি। অথচ প্রতিবার ভোট এলেই ওকে ঘরবন্দী করে রাখা হয়। কিন্তু এভাবে ওকে আটকানো যাবে না? ছেলেটা কত কষ্ট পাচ্ছে! বিজেপি কৌশল নিয়েছে অপবাদ ছড়িয়ে ভাবমূর্তি নষ্ট করো। কিন্তু গরুর টাকা কোথা থেকে আসে? সীমান্তে বিএসএফ থাকে। বিএসএফ তো রাজ্যের নয়, অমিত শাহর মন্ত্রণালয়ের অধীন।’
মমতা আরও বলেন, তারা প্রচার চালাচ্ছে আরও বহু তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হবে। তারা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ধরবে। মন্ত্রী অরূপকে ধরবে। তৃণমূল নেতাদের চোর প্রমাণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে তারা। ৫০–১০০ জনের তালিকা নাকি রোজ দিল্লিতে পাঠানো হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ আমি জোর দিয়ে বলে দিচ্ছি, “মরব তবু মাথা নত করব না। দলীয় নেতাদের নিয়ে জেল ভরো আন্দোলনের ডাক দেব। এই বাংলার মানুষ আমাদের পাশে আছেন, সঙ্গে আছেন। আমাদের জয় হবে।”’