কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা গ্রহণ করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে আগামীকাল মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্র।
৯ আগস্ট ভোরে হাসপাতালটির চারতলার সেমিনার কক্ষে নারী চিকিৎসকের লাশ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। রাতের পালায় হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে এই নারী চিকিৎসক সেমিনার কক্ষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।
নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতাসহ পুরো রাজ্যে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে।
চিকিৎসকদের শুরু করা এই বিক্ষোভ এখন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কয়েক দিন ধরে চলা এই বিক্ষোভে দিকে দিকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান শোনা যাচ্ছে।
আন্দোলন আজ একাদশতম দিনে গড়িয়েছে। আজ সোমবারও কলকাতায় জুনিয়র চিকিৎসকেরা তাঁদের কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছেন।
গতকাল রোববার জুনিয়র চিকিৎসকেরা বিশাল প্রতিবাদ মিছিল করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন। প্রতিবাদ মিছিল করেছেন টালিউডের কলাকুশলীরাও।
ভারতের রাষ্ট্রীয় পদক ‘পদ্ম’ পাওয়া ৭০ জন চিকিৎসক গতকাল এই প্রতিবাদে শামিল হয়ে এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
আন্দোলন ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আর জি কর হাসপাতালকে ‘ঘুঘুর বাসা’ বলেছেন রাজ্যের বিজেপির নেতা দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, এখানকার ওষুধ বাইরে চলে যায়।
পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আন্দোলনকারীদের এই বাংলাকে ‘বাংলাদেশ’ করতে দেওয়া হবে না। মানুষ জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
তৃণমূলের আরেক নেতা ও মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেছেন, ‘মমতার দিকে যে আঙুল তুলবে, তাঁর আঙুল ভেঙে দেওয়া হবে।’
বিজেপির বিধায়ক শংকর ঘোষ বলেছেন, ‘ওরা (তৃণমূলের নেতারা) এখন প্রলাপ বকছে। বুঝে গেছে, ওদের সময় ফুরিয়ে আসছে। আর ধোঁকাবাজি দিয়ে রাজ্য চালাতে পারবে না।’
নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে গতকাল হাজারো ফুটবল সমর্থক কলকাতার যুব ভারতী স্টেডিয়ামের সামনে বিক্ষোভ করেন। বাতিল হয় ডুরান্ডকাপের মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত শনিবার থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য আর জি করসহ পাশের বেলগাছিয়া ও শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় এলাকায় জমায়েতের ওপর ১৬৩ ধারা (পূর্বের ১৪৪ ধারা) জারি করেছে। বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচজন বা তার বেশি মানুষের জমায়েত করা যাবে না।