অশোক গেহলট কি গান্ধী পরিবারের আস্থা হারাচ্ছেন

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, যাকে ঘিরেই সেখানে কংগ্রেসের রাজনীতি আবর্তিত হয়
ছবি: এএনআই

রাজস্থানে কংগ্রেসের সংকট কোন দিকে বাঁক নেবে, আজ মঙ্গলবারেও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট কংগ্রেস সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন কি না, সে বিষয়ে আজও কোনো ইঙ্গিত দেননি তিনি। যদিও গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। মঙ্গলবার দিল্লি আসার কথা থাকলেও গেহলট আসেননি। তবে ঠিকই দিল্লি পৌঁছেছেন রাজ্যে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী শচিন পাইলট। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তিনি দেখা করবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে শোনা গেছে। এর মধ্যে বর্ষীয়ান নেতা এ কে অ্যান্টনিকে কেরালা থেকে দিল্লি আসতে অনুরোধ করেছেন সোনিয়া।

অনুগামীদের বিদ্রোহী করে তোলার জন্য গেহলটের ওপর গান্ধী পরিবার যে রুষ্ট, তার ইঙ্গিত গতকালই পাওয়া গিয়েছিল। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রটে যায়, একসময়ের অন্ধ অনুগামী গেহলটের ওপর থেকে সোনিয়া গান্ধীর আশীর্বাদের হাত সরে গেছে। সেই রটনা আরও বাড়ে দলের কোষাধ্যক্ষ চণ্ডীগড়ের নেতা সাবেক সাংসদ পবন বানসাল কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচনের জন্য দুটি ফর্ম তোলায়।

নির্বাচনে তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা মধুসূদন মিস্ত্রি জানিয়েছেন, শশী থারুর সাতটি ও পবন বানসাল দুটি ফর্ম তুলেছেন। আগামী সেপ্টেম্বর শশী থারুর শেষ দিনে মনোনয়ন দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন। ফর্ম তুললেও বানসাল বলেছেন, সভাপতি হওয়ার ভাবনা তাঁর মাথায় নেই। তবে, মধুসূদন মিস্ত্রি বলেছেন, গেহলট কী করবেন এখনো অজানা। তাঁর দিক থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।

তবে রাজস্থানের সংকট নিরসনের চেষ্টা অবশ্য অব্যাহত আছে। মল্লিকার্জুন খাড়গের কাছে গেহলট দুঃখ প্রকাশ করেছেন। চেষ্টা চলছে এমন কিছু করার, যাতে গেহলট বা পাইলট কাউকেই হারাতে না হয়। পাশাপাশি গান্ধী পরিবারের সম্মানও বজায় থাকে। সেই লক্ষ্যে গেহলট দু–এক দিনের মধ্যে দিল্লি আসতে পারেন। সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করে যা কিছু ঘটেছে, সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে পারেন। কংগ্রেসের হাইকমান্ডও গেহলটের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অনুগামীকে ‘সতর্ক’ করে দিয়ে মীমাংসার পথ প্রশস্ত করতে পারে। এআইসিসির এক সূত্র বলছে, ‘রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা থেকে পুরো নজর ঘুরে গেছে রাজস্থানের দিকে। বিজেপি এতে উৎফুল্ল। দ্রুত এই অচলাবস্থার অবসান ঘটা দরকার।’    

এদিকে অনুগামীদের দিয়ে বিদ্রোহ করানোয় গেহলট বিশ্বাস ও ভরসা দুই–ই হারিয়েছেন। এ অবস্থায় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে কে পছন্দের হবেন, তা অনিশ্চিত। অনুগত হিসেবে যাঁদের নাম বিবেচিত হতে পারে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে, দিগ্বিজয় সিং, মুকুল ওয়াসনিক, কমলনাথ। এঁদের কেউ রাজি না হলে বাধ্য হয়ে সোনিয়াকেই ফের দায়িত্ব নিতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে দৈনন্দিন কাজে সাহায্যের জন্য এক বা দুজন ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা যেতে পারে। তবে এটা পুরোনো ফর্মুলা। এই ফর্মুলা খারিজ করেই গেহলটের নাম বিবেচিত হয়েছিল।  

বর্তমানে ভারতের রাজস্থান ও ছত্তিশগড় রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। রাজস্থান হারাতে হোক, কংগ্রেস তা চায় না। আবার গেহলটকে রেখে দেওয়ার অর্থ দলীয় বিশৃঙ্খলা মেনে নেওয়া। সে ক্ষেত্রে গান্ধী পরিবারের ক্ষমতা ও অধিকার নিয়েও মারাত্মক প্রশ্ন উঠবে। শচিন পাইলট আরও একবার উপেক্ষিত হলে দলে থাকবেন কি না, সেটাও বড় প্রশ্ন। তরুণ শচিন কংগ্রেসের পরবর্তী প্রজন্ম। তাঁকে হারানো কংগ্রেসের জন্য বড় ধাক্কা হবে। সব মিলিয়ে রাজস্থান সংকট কংগ্রেসের কাছে বৃত্তকে চতুষ্কোণে পরিণত করার মতোই কঠিন।