দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে আবগারি (মদ) কেলেঙ্কারির ঘটনায় আপাতত ইডির হেফাজতে থাকতে হচ্ছে। রাউস অ্যাভিনিউতে সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক কাবেরী বাওয়েজা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ইডি হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এদিকে কেজরিওয়ালকে ‘নাটের গুরু’ বলে অভিহিত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
আজ শুক্রবার সিবিআই বিশেষ আদালতে কেজরিওয়ালকে ১০ দিনের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় ইডি। তাদের ভাষ্য, কেজরিওয়ালই এই আর্থিক কেলেঙ্কারির মূল ষড়যন্ত্রকারী। এখান থেকে পাওয়া ঘুষের টাকা তাঁর দল পাঞ্জাব ও গোয়া নির্বাচনে খরচ করেছে।
বিকেল পাঁচটায় শুনানি শেষ হলেও বিচারক রায় স্থগিত রাখেন। রাত সাড়ে আটটায় তিনি জানান, ইডির দাবি মেনে কেজরিওয়ালকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তাদের হেফাজতে থাকতে হবে।
শুক্রবার আদালতে যাওয়ার সময় কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমার জীবন দেশের জন্য নিবেদিত। জেল হলেও সেখান থেকে আমি দেশের জন্য কাজ করে যাব।’
কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা এর আগে কখনো রাজনৈতিক বিবৃতি দেননি। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লেখেন, ‘তিনবারের নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে মোদিজি গ্রেপ্তার করালেন ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে। সবাইকে তিনি দুমড়েমুচড়ে দিতে চাইছেন। দিল্লির জনগণের সঙ্গে এটা বিশ্বাসঘাতকতা। তাঁর জীবন দেশের জন্য সমর্পিত। জনতা সব জানে। জয় হিন্দ।’
ভোটের আগে তাঁকে যে গ্রেপ্তার করা হবে—সেই শঙ্কা কেজরিওয়াল অনেক দিন থেকেই করছিলেন। নিজে বারবার সেই আশঙ্কার কথা প্রকাশ্যে জানিয়েও ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ভোটের আগে বিজেপির সরকার তাঁকে জেলে পুরতে চাইছে যাতে তাদের জয় মসৃণ হয়। আশঙ্কা সত্যি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দলের কর্মী ও সমর্থকেরা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বিক্ষোভের প্রস্তুতি নেন। শুক্রবার সকাল থেকেই তাঁরা বিজেপির সদর দপ্তরের সামনে জমায়েত কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তাতে বাধা দেয় দিল্লি পুলিশ। রাজধানীতে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। গ্রেপ্তার করা হয় মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজসহ বহু নেতা–কর্মীকে। প্রস্তুত রাখা হয় দাঙ্গারোধ বাহিনীকে। কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (আপ) জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিজেপি দপ্তরের সামনে তারা বিক্ষোভ দেখাবে।
কেজরিওয়াল দেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। আপ ঠিক করেছে, জেলে পাঠানো হলেও কেজরিওয়ালই থাকবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নামেই রাজ্য শাসিত হবে। অন্য কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে না।
দিল্লির মন্ত্রী অতিশী বৃহস্পতিবারই জানিয়ে দেন, কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী আছেন। থাকবেনও। দরকার হলে জেল থেকেই তিনি রাজ্য শাসন করবেন। তিনি দোষী সাব্যস্ত হননি। কাজেই বাধা নেই। একই কথা বলেছেন দিল্লির পরিবহনমন্ত্রী কৈলাশ গেহলট। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘যেখানেই থাকুন সরকার কেজরিওয়ালই চালাবেন। কোথাও লেখা নেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।’
আবগারি (মদ) নীতি সম্পর্কিত দুর্নীতি মামলায় আম আদমি পার্টির (আপ) আহ্বায়ক কেজরিওয়ালকে ইডি মোট ৯ বার সমন জারি করেছিল। কিন্তু তিনি একবারও হাজিরা দেননি। শেষবার সমন পাঠানো হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। সেদিনও তাঁকে ইডি দপ্তরে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু হাজির না হয়ে কেজরিওয়াল দিল্লি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন রক্ষাকবচ পাওয়ার আশায়। হাইকোর্ট তা না দেওয়ায় রাতেই তাঁকে তাঁর বাড়ি থেকে অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইনে (পিএমএলএ) গ্রেপ্তার করা হয়। এই মামলাতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন কেজরিওয়ালের সতীর্থ সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী নেতা মনীশ সিসোদিয়া ও এএপির রাজ্যসভা সদস্য সঞ্জয় সিং। গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয় তেলেঙ্গানার ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) নেত্রী কে কবিতাকেও।
শুক্রবার আদালতে ইডির হয়ে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু বলেন, পিএমএলএর নির্দিষ্ট ধারা মেনেই কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এই অপরাধের সঙ্গে সরাসরি শুধু যুক্তই নন, তিনিই নাটের গুরু। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার জন্যই ওই নীতি তৈরি করা হয়েছিল।
শুক্রবার সকালেই কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি শরণাপন্ন হয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে হাজির হয়ে তিনি বলেন, ‘ভোট শুরুর আগেই যদি এমন ঘটনা ঘটে, তা হলে বহু শীর্ষ নেতাকেই জেলে ঢুকতে হবে। অনুগ্রহ করে বিষয়টি আপনি দেখুন।’ প্রধান বিচারপতি তখন তাঁকে বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার এজলাসে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেই অনুযায়ী সিংভি বিচারপতি খান্নার এজলাসে আবেদনও করেন। কিন্তু কিছু পরেই তিনি আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। সিংভি বুঝতে পেরেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট এই অবস্থায় হস্তক্ষেপ করবে না।