মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু

মুইজ্জু আজ ভারত যাচ্ছেন, এই সফরের গুরুত্ব কী

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু আজ রোববার ভারত সফরে যাচ্ছেন।

পাঁচ দিনের (৬ থেকে ১০ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় সফরকালে মুইজ্জু ভারতের কাছে তাঁর দেশের জন্য ‘বেল আউট’ চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, দ্বীপদেশটি অর্থনৈতিক সংকটে আছে। দেশটি ঋণখেলাপি হওয়ার আশঙ্কা করছে।

‘বেল আউট’ হচ্ছে দেনার দায়ে বা মূলধনসংকটে পড়ে দেউলিয়া হওয়ার পথে কোনো দেশ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তরফে আর্থিক সহায়তা করা।

গত বছরের শেষ দিকে মুইজ্জু প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি এই প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন।

নির্বাচনী প্রচারে মুইজ্জু তাঁর দেশের ওপর নয়াদিল্লির প্রভাব কমানোর অঙ্গীকার করেছিলেন। তাঁর নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রে ছিল ‘ইন্ডিয়া আউট’ বা ‘ভারত হটাও’ নীতি।

মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েন চলে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালদ্বীপ যে তার বড় প্রতিবেশী দেশটিকে (ভারত) উপেক্ষা করতে পারে না, তার ইঙ্গিত দিচ্ছে মুইজ্জুর এই সফর।

গত মাসে (সেপ্টেম্বর) মালদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থ দিয়ে দেড় মাসের আমদানির খরচ মেটানো সম্ভব।

গত মাসে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি’স মালদ্বীপের ক্রেডিট রেটিং (ঋণমান) কমিয়ে দেয়। সংস্থাটি বলে, মালদ্বীপের ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাস্তবিক অর্থে বেড়েছে।

এখন ভারত ‘বেল আউট’ দিলে তা মালদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে শক্তিশালী করবে।

মুইজ্জু ইতিমধ্যে তুরস্ক ও চীন সফর করেছেন। বিশেষ করে গত জানুয়ারিতে তাঁর চীন সফরকে নয়াদিল্লির প্রতি মালদ্বীপের একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ হিসেবে দেখা হয়েছিল।

কারণ, মালদ্বীপের পূর্ববর্তী নেতারা নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁদের প্রথম বিদেশ সফরের জন্য নয়াদিল্লিকেই বেছে নিয়েছিলেন।

মুইজ্জু নির্বাচিত হওয়ার পর মালদ্বীপের তিনজন কর্মকর্তা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন। এর জেরে ভারতে বিতর্ক শুরু হয়।

মালদ্বীপের বিশ্লেষক ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রভাষক আজিম জহির বলেন, প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর ভারত সফর বিভিন্নভাবে একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মালদ্বীপ তার প্রতিবেশী ভারতের ওপর কতটা নির্ভরশীল, এর প্রতিফলন মুইজ্জুর এই সফর। ভারতের ওপরে মালদ্বীপের যে নির্ভরতা, তা অন্য কোনো দেশ সহজে পূরণ করতে পারবে না।

ভারত মহাসাগরে অবস্থিত প্রায় ১ হাজার ২০০টি প্রবালদ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ গঠিত। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার।

ছোট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ তার বেশির ভাগ খাদ্য, অবকাঠামো নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল।

নয়াদিল্লি ও মালে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি যে মুইজ্জুর সফরকালে মালদ্বীপের জন্য ভারতের একটি আর্থিক প্যাকেজের বিষয় আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটি আলোচনায় থাকবে।