যোগী আদিত্যনাথ ও মোহন ভগবত
যোগী আদিত্যনাথ ও মোহন ভগবত

আরএসএস প্রধানের সঙ্গে যোগীর বৈঠকে কী আলোচনা হলো

ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে গতকাল শনিবার রাজ্যের গোরখপুরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধান হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভগবত।

গোরখপুর থেকে স্থানীয় এক সাংবাদিক প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দুটি বৈঠক তাঁরা করেছেন। তবে এই বৈঠক সম্পর্কে বিজেপির নেতারা বিশেষ কিছু জানেন না। আরএসএসের স্থানীয় নেতারাও এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। ওই বৈঠকের আগে মোহন ভগবত আরএসএসের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বলেও জানা গেছে।

ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় ‘এক্সক্লুসিভ’ খবর হিসেবে আজ রোববার প্রকাশিত হলে এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে হইচই শুরু হয়। এর অনেক কারণ রয়েছে।

প্রথমত, নির্বাচনে এককভাবে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার পর কয়েক দিন আগে ভগবত প্রকাশ্যে বিজেপির নাম না করে সমালোচনা করেন। মণিপুরে বিজেপির ভূমিকাসহ দলের নেতাদের অহংকার নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।

দ্বিতীয়ত, এরপরই ভগবত বৈঠক করলেন যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপির দুই শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সম্পর্ক নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলে নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে।

দীর্ঘ সময় ধরেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজেপিসহ আরএসএসের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা খোলাখুলি বলতে শুরু করেছেন, শীর্ষ পদে বসে গুজরাটের নেতা ও আমলারা কার্যত ভারত নিয়ন্ত্রণ করছেন। অনেকেই মনে করেন, এই বক্তব্যকে অনেকটাই পেছন থেকে প্রভাবিত করছেন যোগী আদিত্যনাথ।

ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশে বিজেপির ভেতরে এখন নিশ্চিতভাবেই যে দুটি শিবির তৈরি হয়েছে, তা নির্বাচনের আগেই বোঝা গিয়েছিল। কারণ, উত্তর প্রদেশে নির্বাচন পরিচালনা করেন অমিত শাহ। বিষয়টি আদিত্যনাথকে সন্তুষ্ট করেনি বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে।

ঠিক এরপরই মোহন ভগবত বৈঠক করলেন যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে। এই যোগীকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদের অন্যতম দাবিদার বলে ভারতের প্রচারমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে। যোগীর সঙ্গে ভাগবত প্রথমে গতকাল বিকেলে ক্যাম্পিয়ারগঞ্জ এলাকার একটি স্কুলে দেখা করেন। সেখানে আরএসএসের প্রধান একটি সভা এবং আরএসএসের অন্য একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে শহরের পাক্কিবাগ এলাকার সরস্বতী শিশু মন্দিরে দ্বিতীয় বৈঠক হয়।

বিজেপির সমালোচনা করে নাগপুরে ভাগবতের গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতার এক সপ্তাহ পর তিনি উত্তর প্রদেশে গিয়ে আদিত্যনাথের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন।

বিজেপি ২০১৪ সালে উত্তর প্রদেশে ৭১ এবং ২০১৯ সালে ৬২টি আসনে জয় পেয়েছিল। কিন্তু এবার জিতেছে মাত্র ৩৩ আসনে। অন্যদিকে রাজ্যে সমাজবাদী পার্টি-কংগ্রেস জোট ৪৩ আসন জিতে বিজেপিকে ছাড়িয়ে গেছে। প্রধানত, হিন্দুত্ববাদী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র উত্তর প্রদেশের খারাপ ফলের কারণেই বিজেপি এবার এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বলে মনে করা হচ্ছে।

উত্তর প্রদেশে বিজেপির ফল কেন খারাপ হলো, সেই বিষয়েই আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে, এমনটাই গোরখপুরের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাংবাদিকেরা মনে করছেন।