মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

রাজ্যকে বাদ দিয়ে গঙ্গা ও তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা মেনে নেওয়া হবে না: মমতা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত হতে দেওয়া সম্ভব নয়। প্রাথমিক কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে এ বৈঠক ত্রিপক্ষীয় স্তরের সবাইকে নিয়ে করা হতো। রাজ্যের নদীর ক্ষেত্রে রাজ্যকেও ডাকা হতো, কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় স্তরে।

আজ সোমবার পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি এবং গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে তিনি আজ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠাচ্ছেন।

গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। আজ সংবাদ সম্মেলন তিনি মূলত ডেকেছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি জমি জবরদখল হওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য জানাতে। ভবিষ্যতে জবরদখল রোধে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, সেটারও একটা রূপরেখা দেন মমতা। সেখানেই তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা ও গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির প্রশ্নে কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের যে কথা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গঙ্গায় দীর্ঘদিন ধরে খনন (পলিমাটি তোলার কাজ) হচ্ছে না, সংস্কার হচ্ছে না। ফলে বাংলায় বন্যা ও ভাঙনের মতো সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। তিস্তা নিয়েও সমস্যা হয়েছে। এগুলো দ্বিপক্ষীয় বিষয় নয়, রাজ্যের স্বাস্থ্য জড়িত। সেখানে রাজ্যকে বাদ দিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হলো।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গত শনিবার ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন। প্রধানমন্ত্রী মোদি জানান, বাংলাদেশের দিকে তিস্তার পানি সংরক্ষণ ও পরিচালন পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য শিগিগিরই একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে যাবে।

তিস্তা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জল দেওয়া হলে এখানে মানুষের সমস্যা সৃষ্টি হবে, এটা কেন্দ্র জানে। তারপরও তারা রাজ্যের সঙ্গে কথা না বলে এই কাজ করল। এ বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতি আমার ভালোবাসা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি করে কিছু করা মুশকিল।’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বড় বাঁধ দিয়ে সিকিমে ১৪টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। ফলে শীত মৌসুমে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশে পানিপ্রবাহ কমে যায়। বিষয়টি কেন্দ্রের অজানা নয়, তা সত্ত্বেও এই সমঝোতা হলো।

তৃণমূল কংগ্রেসের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, যৌথ নদীর বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এককভাবে সমঝোতা স্মারক সই করার বিষয়টি লোকসভার অধিবেশনেও তুলবে তৃণমূল কংগ্রেস। বিষয়টি নিয়ে তারা যাতে অন্য দলেরও সমর্থন পায়, তা মাথায় রেখে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা। তৃণমূল কংগ্রেসের বিশেষজ্ঞ দল বলেছে, এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে মধ্যপশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদের নদীয়ায় বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

ফারাক্কার বাঁধকে মুর্শিদাবাদ ও মালদায় গঙ্গার ভাঙনের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, ২০১৭ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও ফরাক্কার বাঁধের বিরোধিতা করেছিলেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, বেড়িবাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

অতীতে সিপিআইএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারও তিস্তা চুক্তির প্রবল বিরোধিতা করেছিল। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বলেছে, স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের দলের কাছে রাজ্যের মানুষের চাহিদা প্রাধান্য পাবে। বিষয়টি মাথায় রেখেই ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, এবার রাজ্যকে বাদ দিয়ে সেই আলোচনা দ্বিপক্ষীয় স্তরে করা হয়েছে। এটা রাজ্যের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।