ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশি ২৫ জন জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। চারটি ট্রলার নিয়ে এসব জেলে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। ট্রলার ডুবে এসব জেলে ভাসতে ভাসতে পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ঢুকে পড়েন। পরে ভারতীয় ট্রলারে থাকা জেলেরা ভাসমান অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করেন।
ভারতের সমুদ্র উপকূল থেকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশের ২৫ জেলে এখন পশ্চিমবঙ্গের রায়দিঘী ও কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দরে রয়েছেন। উদ্ধার হওয়া জেলেদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়েছেন। অসুস্থ জেলেদের কাকদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে ডুবে যাওয়া ট্রলারের অনেক জেলে এখনো নিখোঁজ বলে জানা যাচ্ছে।
ঝড়ের কারণে গত শুক্রবার বাংলাদেশ–ভারত আন্তর্জাতিক নৌ সীমানার কাছে পশ্চিমবঙ্গের বাঘের চরে স্বাধীন ফিশিং নামে একটি ট্রলার ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা ১১ জেলে ভাসতে ভাসতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বাঘের চরে গেলে একটি ভারতীয় ট্রলার ১১ জেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার রায়দিঘী মৎস্যবন্দরে। সেখানে তাঁদের আশ্রয় দেন মৎস্যজীবী সমিতির কর্মকর্তারা। তাঁদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়। অসুস্থদের ভর্তি করা হয় স্থানীয় এক হাসপাতালে।
এর আগে গত শনিবার দুপুরে বাঘের চরের কাছে সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় আরও সাতজন বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার করেন ভারতীয় জেলেরা। উদ্ধার হওয়া এই ১৮ জেলের মধ্যে কাকদ্বীপে আশ্রয় নিয়েছেন ৭ জন ও রায়দিঘীতে আশ্রয় নিয়েছে ১১ জন। তাঁদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয় মৎস্যজীবী ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। তাঁরাই বাংলাদেশি জেলে উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানান। এখন পুলিশ বাংলাদেশের এসব জেলেকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে এমভি স্বাধীন ফিশিং নামের বাংলাদেশের এক ট্রলার ডুবে যায়। ওই ট্রলারে থাকা জেলেরা সমুদ্রে ভাসতে থাকেন। তখন ভারতের ট্রলার এফবি মালবিকা তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে রায়দিঘী মৎস্যবন্দরে। বাংলাদেশি ট্রলারের সারেং ইব্রাহিম মোল্লা বলছেন, তাঁদের ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর জেলেরা চার ঘণ্টা ধরে সমুদ্রে সাঁতার কাটছিলেন। ওই সময় একটি ভারতীয় ট্রলার এসে তাঁদের উদ্ধার করে রায়দিঘী মৎস্যবন্দরে নিয়ে আসে।
শনিবার দুপুরের দিকে বাঘের চর দ্বীপের কাছ থেকে আরও সাতজন বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার করে অপর এক ভারতীয় ট্রলার। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দরে। চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে। এর আগে শুক্রবার বিকেলে এফবি ভাইবোন ও এফবি বাবা–মায়ের দোয়া নামের আরও দুটি বাংলাদেশি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। ভাইবোন নামের ট্রলারটিতে ১৩ জন এবং বাবা–মায়ের দোয়া ট্রলারটিতে ছিলেন ১৭ জন মৎস্যজীবী। এই দুই ট্রলার থেকে সাতজনকে উদ্ধার করা গেলেও বাকিদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদিকে ডুবে যাওয়া প্রথম ট্রলারের সাতজন জেলের বাড়ি পিরোজপুর জেলায় বলে জানা গেছে।
উদ্ধার হওয়া এসব বাংলাদেশি জেলেকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলা প্রশাসন।
কোস্টগার্ডের গোয়েন্দা শাখার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মামুন হাসান প্রথম আলোর খুলনার নিজস্ব প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাংলাদেশি জেলেদের উদ্ধারের ঘটনাটি আমরা শুনেছি। এ নিয়ে ভারতীয় কোস্টগার্ডের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ চলছে। এখন সমুদ্র উত্তাল অবস্থায় আছে। সমুদ্র শান্ত হলে আমরা তাঁদের উদ্ধারের ব্যবস্থা নেব।’