দিল্লিতে আজ আম আদমি পার্টির বিক্ষোভের সময় বাধা দেয় পুলিশ
দিল্লিতে আজ আম আদমি পার্টির বিক্ষোভের সময় বাধা দেয় পুলিশ

আম আদমি পার্টিকে বিক্ষোভ করতেই দিল না দিল্লির পুলিশ

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী দিল্লি জোড়া প্রতিবাদে গমগম করে উঠল। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (আপ) আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে আপ বিধায়ক, কর্মী ও সমর্থকেরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নেন। পাশাপাশি কেজরিওয়ালের ইস্তফার দাবিতে দিল্লি সরকারের সচিবালয় অভিযানে শামিল হয় বিজেপি। আপ সমর্থকদের বিক্ষোভের সামাল দেয় দিল্লি পুলিশ। জায়গায় জায়গায় ব্যাপক ধরপাকড় চলে। পুলিশের সঙ্গে আপ সমর্থকদের ধস্তাধস্তি চলে।

আপকে বিক্ষোভ কর্মসূচি করার অনুমতি দিল্লি পুলিশ দেয়নি। পুলিশের দাবি, আপ অনুমতিও চায়নি। বিজেপিকে অবশ্য মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমতি না মেলায় আপ নেতৃত্ব শুধু এক জায়গায় জমায়েত না করে গেরিলা পদ্ধতিতে জায়গায় জায়গায় জড়ো হওয়ার কৌশল নেয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার পাশাপাশি আটক করে বাসে চাপিয়ে অন্যত্র নিয়ে যায়। এর ফলে নয়াদিল্লির জায়গায় জায়গায় রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে আপ নেতৃত্ব এই বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করে। ঠিক করে, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবন ঘেরাও করা হবে। গতকাল সোমবারেই আপ নেতৃত্ব জানিয়ে দেয়, আজ সকাল ১০টা নাগাদ সব বিধায়ক ও দলের কর্মী-সমর্থক হাজির হবেন প্যাটেল চক মেট্রো স্টেশনের পার্কিং এরিয়ায়। যন্তর মন্তরের লাগোয়া এই জায়গা থেকেই তাঁরা মিছিল করে যাবেন লোককল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। কিন্তু পুলিশ তা হতে দেবে না জেনে তাঁরা গেরিলা পদ্ধতিতে জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ দেখান। দলীয় দপ্তরের সামনে অনেকে জড় হন। সর্বত্র সবার হাতে ছিল কেজরিওয়াল ও ভগত সিংয়ের ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড।

অভিযান রুখতে দিল্লি পুলিশ তৎপরতার অন্ত রাখেনি। দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দেবেশ কুমার মহলা জানিয়ে দেন, আপ এই অভিযানের অনুমতি চায়নি। তাদের অভিযান করতে দেওয়াও হবে না। সে জন্য দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এই ধারায় চারজনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ। পরিস্থিতির মোকাবিলায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

এর বাইরে দিল্লি পুলিশ আরও বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয়—যেমন পুলিশের ৫০টি চলমান গাড়ির টহল, যাতে কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সাবধানতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মেট্রোরেলের প্যাটেল চক স্টেশনের ৩ নম্বর ফটক, লোককল্যাণ মার্গ ও কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটক বন্ধ রাখা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, কাউকে কোথাও বিক্ষোভ দেখাতে দেওয়া হবে না।

বেশ কিছু বড় সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে বলে দিল্লি পুলিশ আগেভাগে জনতাকে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ওই সব রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হলে হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বেরোতে হবে।

আপের বিক্ষোভ কর্মসূচির মতো দিল্লি বিজেপিও পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারা জমায়েতের ডাক দেয় ফিরোজ শাহ কোটলায়। সেখান থেকে বিজেপির নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরা দিল্লি সচিবালয়ে মিছিল করে যাবেন বলে জানিয়েছেন। দিল্লি বিজেপির সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি, গ্রেপ্তারের পর কেজরিওয়াল হয় পদত্যাগ করুন, নয়তো তাঁকে বরখাস্ত করা হোক।

আপ চাইছে এই সংকটে দলকে সংঘবদ্ধ করে তুলতে। সে জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তারা সক্রিয় হচ্ছে। আজ দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব নেতা, কর্মী, সমর্থকের ‘ডিপি’তে জেলবন্দী কেজরিওয়ালের ছবি দিতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার আপ নেতারা রঙের উৎসবে শামিল হননি। এই সংকটে ‘ইন্ডিয়া জোট’ও সক্রিয়। ৩১ মার্চ দিল্লিতে জোট নেতারা সমাবেশ করবেন বলে জানিয়েছেন। তার আগেই অবশ্য জানা যাবে, দিল্লি হাইকোর্ট কেজরিওয়ালের জামিন গ্রাহ্য করেন, না অগ্রাহ্য।