ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যে মুসলমানদের জন্য শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণব্যবস্থার কোনোরকম পরিবর্তন ঘটানো হবে না। তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সাধারণ সম্পাদক ও ভাবী মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর ছেলে লোকেশ নাইডু স্পষ্টভাবে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
লোকেশ এ কথাও বলেছেন, প্রায় দুই দশক ধরে এই প্রথা চলে আসছে এবং এটা মোটেই কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের তুষ্টকরণের জন্য নয়। এই নীতির লক্ষ্য রাজ্যের মুসলমানদের দারিদ্র্যসীমার বাইরে টেনে তোলা। তাঁদের সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসা।
লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচনী প্রচারে টিডিপি নেতৃত্ব এবার প্রতিটি জনসভায় মুসলমানদের সংরক্ষণ বজায় রাখার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এর প্রধান কারণ বিজেপি। যে দল মুসলমানদের সংরক্ষণের বিরোধী, যে প্রথা তুলে দেওয়ার জন্য তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যারা মনে করে মুসলমানদের সংরক্ষণ দেওয়া তুষ্টকরণের রাজনীতি, তারা এই ভোটে জোট সঙ্গী হওয়ায় মুসলমান সমর্থন যাতে টিডিপির বিরুদ্ধে না যায়, সে জন্যই বারবার কথাটি টিডিপি নেতৃত্ব মনে করিয়ে দিয়েছে। লক্ষণীয়, বিজেপি নেতারা অন্য রাজ্যে মুসলমান সংরক্ষণ নিয়ে সরব হলেও অন্ধ্র প্রদেশে সেভাবে এ নিয়ে রা কাড়েননি। যদিও পার্শ্ববর্তী তেলেঙ্গানায় সরব ছিলেন।
লোকসভা ও বিধানসভায় বিপুল সাফল্যের পর কেন্দ্রে যখন সরকার গড়ার তোড়জোড় চলছে, ঠিক সেই সময় লোকেশ নাইডু নতুন করে বিষয়টির অবতারণা করলেন। গত শুক্রবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, এই প্রশ্নে তাঁরা বিজেপির আপত্তি আমলে নেবেন না।
ক্ষমতায় থাকার জন্য বিজেপি অবশ্য এ–জাতীয় বিতর্কিত বিষয় বারবার এড়িয়ে গেছে; যেমন গোটা উত্তর–পূর্বাঞ্চলে গো–হত্যা ও গোমাংস ভক্ষণ নিয়ে তারা সরব হয়নি। আসামে সিএএ ও এনআরসি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যায়। এখন দেখার বিষয়, নীতিগতভাবে বিরোধী হলেও কেন্দ্রে সরকার ধরে রাখা ও অন্ধ্র প্রদেশে সরকারের অংশ হওয়ার স্বার্থে বিজেপি মুসলমান সংরক্ষণ নিয়ে শরিকদের সঙ্গে কীভাবে সমঝোতার রাস্তায় হাঁটে।
বিষয়টি জটিল। কারণ, টিডিপি সংরক্ষণব্যবস্থা জারির পক্ষে অনড়, অথচ রাজ্যে রাজ্যে প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কংগ্রেস চায় সাধারণ মানুষের সংরক্ষণ কেড়ে মুসলমানদের দিতে। তাঁরা ক্ষমতায় এলে এই ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে নেবেন। মোদি ও শাহর মতে, অন্য অনগ্রসরদের তালিকায় মুসলমানদের ঢোকানোর সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক। ধর্মের আধারে সংরক্ষণ দেওয়া যায় না।
তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে ২০০৭ সাল থেকেই মুসলমানদের জন্য শিক্ষা ও সরকারি চাকরিতে ৪ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা চালু আছে। আর্থসামাজিক সূচক অনুযায়ী অন্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) মধ্যে মুসলমানদের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে দেশের ১৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। লোকেশ সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে কম। সে কারণে তাঁদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। সরকারের কাজ তাঁদের দারিদ্র্যসীমার ওপরে নিয়ে আসা। এটা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ সিদ্ধান্ত কিছুতেই কারও তুষ্টকরণ নয়।’ তিনি বলেন, ‘এটা এমনও নয় যে আমরা তোমাদের সংরক্ষণ দিচ্ছি, তোমরা আমাদের ভোট দাও। দেওয়া–নেওয়ার ওই মনোভাব এখানে খাটে না।’
লোকেশ আরও বলেন, ‘একটা দেশকে উন্নত হতে গেলে সবাইকে নিয়েই এগোতে হয়। কাউকে বাদ দিয়ে এগোনো যায় না। সেভাবে এগিয়ে চলার একটা বিরাট সুযোগ আমাদের সামনে এসেছে। টিডিপি সবাইকে নিয়েই চলে। এটাই এই দলের ট্রেডমার্ক।’
নীতিগত বিরোধ মেনে নিয়েই অন্ধ্র প্রদেশে সরকারের শামিল হতে চলেছে বিজেপি, কেন্দ্রেও সরকারের শরিক হতে চলেছে টিডিপি। এই বিরোধিতা সরকারের স্থায়িত্বের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।