কলকাতার বার লাইব্রেরির অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। ২৮ জুন
কলকাতার বার লাইব্রেরির অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। ২৮ জুন

বিচারপতিরা কখনো ঈশ্বর হতে পারেন না: ভারতের প্রধান বিচারপতি

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, ‘বিচারপতিরা কখনো ঈশ্বর হতে পারেন না। আর বিচারালয় কখনো মন্দির হতে পারে না। কোনো বিচারপতি যদি নিজেকে ঈশ্বর ভেবে নেন, তবে ঘোর বিপদ!’

গতকাল শনিবার কলকাতায় এক পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন তিনি।

ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘একজন বিচারপতির মধ্যে ঐশ্বরিক গুণ নয়; দরদ, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মতো মানবিক গুণ থাকা প্রয়োজন।’

প্রধান বিচারপতি কলকাতা হাইকোর্টের বার লাইব্রেরির দ্বিশতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতায় এসে গত শুক্রবার একটি অনুষ্ঠানে প্রথম যোগ দেন। আর গতকাল যোগ দেন কলকাতার ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায়।

আলোচনা সভায় বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন, ‘বিচারপতিদের অধিকাংশ সময় লর্ডশিপ, অনার বা লেডিশিপ বলে সম্বোধন করা হয়। কিন্তু মানুষ যদি বিচারালয়কে ন্যায়ের মন্দির ভেবে নেন, তাহলে ঘোর বিপদ! আর আমরা বিচারপতিরা নিজেদের যদি ওই মন্দিরের দেবতা ভেবে নিই, তাহলেও ঘোর বিপদ!’ প্রধান বিচারপতি বলেন, সাধারণ মানুষ বিচারালয়ে যান ন্যায়বিচারের আশায়।

বিচারপতি চন্দ্রচূড় আরও বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে সুবিচার পেলে অনেকেই বিচারালয়কে মন্দির মনে করতে পারেন। কেউ মনে করতে পারেন, বিচারপতিরা ঈশ্বরের মূর্ত প্রতীক।’ এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সাবধানী বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘আমি বরং বলব, বিচারপতিদের উচিত নিজেদের “জনগণের সেবক” হিসেবে ভাবা। আর তাঁরা যদি ভাবতে পারেন তাঁরা মানুষের সেবা করছেন, তাহলে দেখবেন, বিচারপতিদের ভাবমূর্তিতে দয়া, সহমর্মিতা, সহানুভূতির মতো ভাবনার প্রতিফলন ঘটবে। আর একমাত্র তাহলেই একজন বিচারক বিচার করবেন কোনো পূর্ব ধারণার বশবর্তী না হয়ে।’

গতকালের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি তাঁর ভাষণেও ন্যায়বিচারের কথা বলেন।

গত শুক্রবার বার লাইব্রেরির অনুষ্ঠানে তিনি আইনজীবীদের পেশাদারত্ব বাড়ানোর জন্য বলেন, ‘জুনিয়রদের জায়গা দিতে হবে।’ নারীদের আরও বেশি করে আইন পেশায় যুক্ত করারও পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে কথায় কথায় আদালতে কর্মবিরতিরও সমালোচনা করেন প্রধান বিচারপতি। একজন সহকর্মীর প্রয়াণে যেভাবে আদালত সারা দিনের কাজকর্ম বন্ধ করেন, তারও সমালোচনা করেন তিনি, ‘অথচ মানুষ বিচার পাওয়ার জন্য কাঁদছেন। সেখানে এভাবে আইনজীবীদের ছুটির বিলাসিতায় হয়তো কেউ বিচার পাচ্ছেন না। হয়তো কারও জীবনে অন্ধকার নেমে আসছে।’