পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় ব্যভিচারের অভিযোগ তুলে দুই তরুণ–তরুণীকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে পেটালেন তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা। ওই নেতার নাম তাজিমুল ইসলাম। যাঁর বিরুদ্ধে দুই–দুটো খুনের মামলা আছে। প্রকাশ্যে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে পুরো রাজ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শাসক দল এ ঘটনার সমালোচনা করলেও দলের বিধায়ক সাফাই গেয়েছেন ওই কর্মীর পক্ষে।
চোপড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গত শুক্রবার প্রকাশ্যে সালিসি সভায় ডেকে প্রকাশ্যে এক বান্ডিল বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মারধর করেন তাজিমুল। যুবককে বারবার মাটিতে ফেলে মারধর ও লাথি মারার সঙ্গে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মারা হয়। মেয়েটিকে একইভাবে মারপিট করা হয়। চুলের মুঠি ধরে কখনো মাটি থেকে তুলে মারধর করা হয় এবং বাঁশের কঞ্চি দিয়ে প্রহার করা হয়। এলাকার মানুষ তা দেখলেও কেউ প্রতিবাদ করেনি।
স্থানীয় অনেকেই বলেন, ওই এলাকা তাজিমুলের রাজ্য হিসেবে পরিচিত। তাজিমুলের ডাক নাম জেসিবি। জেসিবি হলো বুলডেজার কোম্পানির নাম। তাজিমুল এতই শক্তিশালী যে কাউকে সে বুলডোজারের মতো ভেঙে চৌচির করে দিতে পারে।
এই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ শনিবার প্রকাশ্যে এলে রোববার জেসিবিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ সোমবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাঁকে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ড দিয়েছে।
এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে কোচবিহারের এক সংখ্যালঘু নারী বিজেপি করায় তাঁকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। তাঁর বাড়িঘরে হামলা চালায়। এসব ঘটনা নিয়ে আজ সকালে রাজ্য বিধানসভা ভবনের দরজার কাছে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে বিধানসভার নারী বিধায়ক ও নেত্রীরা অবস্থান ধর্মঘটে বসেন। অবস্থানকারীদের হাতে ছিল ’বিবস্ত্র গণতন্ত্র’ লেখা ফেস্টুন। দাবি ছিল নারী নির্যাতনের বিচার ও সিবিআই তদন্তের।
অগ্নিমিত্রা পাল দাবি করেন, এই রাজ্যে গণতন্ত্র বিপন্ন। রাজ্যের নারী মুখ্যমন্ত্রী এই রাজ্যের নারীদের ওপর তৃণমূলের নির্যাতনের কোনো ব্যবস্থা নেন না। বরং অত্যাচারের ইন্ধন জোগায়।
বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের কথায়, ‘চোপড়ার ওই ঘটনা যাঁরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন, ভিডিও তুলে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলেন কিন্তু প্রতিবাদ করলেন না, তাঁরা আমাদের রাজ্যের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতীক। সবাই সব দেখছেন। কিন্তু মুখ খুলছেন না।’
সিপিএম নেত্রী কনীনিকা ঘোষ বোস বলেছেন, ‘ওই এলাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্যও মানুষ চুপ করে থাকতে পারেন। প্রতিবাদ করলে তাঁদের ওপর নতুন আক্রমণের ভয় কাজ করে থাকতে পারে।’
এ ঘটনার পর চোপড়া থানার পুলিশ কর্মকর্তা অমরেশ সিংকে শোকজ করা হয়েছে। রাজ্যপালও চোপড়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকারের রিপোর্ট তলব করেছেন। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আগামঅকাল চোপড়া পরিদর্শনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।