ভারতে লোকসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্য নিয়োগ ঠেকাতে করা মামলা সুপ্রিম কোর্ট আগামী শুক্রবার শুনবেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না অন্যতম মামলাকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে জানান, প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় তাঁকে জানিয়েছেন, শুক্রবার মামলাটি শোনার জন্য গৃহীত হয়েছে। অথচ ওই দিনই কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন কমিশনের সদস্য নিয়োগের বৈঠক ডেকেছে।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য অরুণ গোয়েল সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে আরেক নির্বাচন কমিশনার অনুপ পান্ডে অবসরে যান। ফলে তিন সদস্যের কমিশনে আছেন মাত্র একজনই—মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) রাজীব কুমার।
গোয়েলের পদত্যাগের আগেই কমিশনার নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটির বৈঠক ডাকে কেন্দ্রীয় সরকার। ১৫ মার্চ সেই বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগেই মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেত্রী জয়া ঠাকুর ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) দুটি পৃথক মামলা সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করেন। শুক্রবার তারই শুনানি হবে।
দুই পক্ষেরই অভিযোগ, ইসির নিয়োগ কমিটি থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে যে নতুন আইন হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। কমিশনারদের নিরপেক্ষতাও রক্ষিত হবে না। ওই আইনের বৈধতা আগে বিচার করা হোক, তারপর নতুন কমিশনার নিয়োগ করা যাবে।
এডিআরের আরজিতে এই প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, নতুন আইনের বৈধতা বিচারের আগে যদি কমিশনার নিয়োগ করা আবশ্যিক হয়, তাহলে পুরোনো প্রথায় আলোচনার মাধ্যমে যেন তা করা হয়।
ভারতের তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের নিযুক্তিতে এযাবৎ কোনো আইন ছিল না। প্রথা অনুযায়ী সিইসি ও দুই ইসির নিয়োগ করতেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী নেতা ও প্রধান বিচারপতি। সেই কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন যে আইন করা হয়েছে, তাতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আরও এক সদস্য এবং বিরোধী নেতা।
বিরোধীরা তখন থেকেই বলে আসছেন, এই আইনের মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকার পছন্দের আমলাদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন পরিচালন করতে চায়। ওই আইনের বৈধতাই এই মামলায় চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ মার্চ অনুষ্ঠেয় বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বিরোধী নেতা কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অধীর চিঠির জবাবে গতকাল মঙ্গলবার সরকারকে জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী ‘সার্চ কমিটি’ কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করে। সেসব নাম থেকে কমিটির সদস্যরা ইসি সদস্যকে বেছে নেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব রাজীব মনিকে চিঠি লিখে অধীর মনোনীত আমলাদের নাম আগে থেকে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে বলেছেন, যেভাবে মুখ্য তথ্য কমিশনার ও অন্য কমিশনার অথবা মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার ও ভিজিল্যান্স কমিশনারদের নিয়োগ করা হয়, এ ক্ষেত্রেও সেভাবেই ইসির সদস্য বাছাই করা উচিত।
নতুন আইন প্রণয়নের পর এখনো কোনো ইসি নিয়োগ হয়নি। শুক্রবার বৈঠক হলে সেটা হবে প্রথম নিযুক্তি। তার আগে সুপ্রিম কোর্ট কোনো নির্দেশ দেন কি না, তা আগ্রহ সঞ্চার করেছে।