মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হাত ধরে আবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজ্যপাল রাজেন্দ্র আরলেকরের হাতে নিজের ইস্তফাপত্র তিনি তুলে দেন।
পরে সংবাদমাধ্যমকে নীতীশ কুমার বলেন, ‘মহাজোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছি। রাজ্যপালকে পদত্যাগপত্র দিয়ে বলেছি সরকার ভেঙে দিতে।’
বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যপাল নীতীশ কুমারকে তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালাতে বলেছেন। সব সূত্র অনুযায়ী, যত দ্রুত সম্ভব বিজেপি ও অন্য সহযোগীদের সমর্থন নিয়ে নীতীশ নবমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন।
সংবাদমাধ্যমকে নীতীশ বলেন, পুরোনো জোট (বিজেপির) ছেড়ে তিনি নতুন জোট গড়েছিলেন কাজ করবেন বলে। কিন্তু তাতে বাধা পাচ্ছিলেন। কাজের পরিস্থিতি ঠিক ছিল না। দলের অনেকেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই ইস্তফার সিদ্ধান্ত।
কাজের পরিস্থিতি কেন অনুকূল ছিল না সেই ব্যাখ্যা নীতীশ কুমার অবশ্য দেননি। শুধু বলেন, এই জোটের সঙ্গে কাজ করতে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছিল। সেই সমস্যার কথা দলকে জানাতে দলই তাঁকে জোটত্যাগের পরামর্শ দিয়েছে। এরপর কী হতে চলেছে, সেই প্রশ্নের উত্তরে নীতীশ বলেন, দলের সঙ্গে বসে তা ঠিক করবেন।
বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধা ও ছাড়া নীতীশের কাছে নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারবার তিনি এনডিএ ছেড়েছেন আবার কিছুদিন পর যোগও দিয়েছেন। এভাবে তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্ব লাভ ও ইস্তফাদানের এটি হলো অষ্টম অধ্যায়।
২০১৯ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে লোকসভা ভোটে রাজ্যের ৪০টির মধ্যে ৩৯টি আসন পেয়েছিল বিজেপি ও জেডিইউ। পরের বছর বিধানসভা ভোটে জয়ও বিজেপির সাহচর্যে। কিন্তু ২০২২ সালে সেই এনডিএ ছেড়ে তিনি হাত ধরেন আরজেডি, কংগ্রেস ও বামপন্থীদের। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বছর দু-এক কাটানোর পর লোকসভার ভোটের মুখে ফের মহাজোট ছেড়ে যোগ দিতে চলেছেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএতে।
আজ সকালেই বিজেপি পরিষদীয় দল সর্বসম্মতভাবে নীতীশের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে চিঠি তৈরি করেছে। সবকিছু ঠিকমতো এগোলে সন্ধ্যাতেই বিজেপির সমর্থনে নবমবারের মতো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কিছুই ঠিকঠাক না চলাকে দায়ী করেছেন নীতীশ। তিনি বলেন, নিজে দায়িত্ব নিয়ে ইন্ডিয়া জোট গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। জোট তৈরিও হয়। কিন্তু কেউই ঠিকঠাক কাজ করছিল না।
নীতীশের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আজ রোববার বলেন, উনি ঠিকই করে নিয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটে থাকবেন না। এমনটাই যে উনি করবেন, সেই খবরও তাঁদের ছিল।
আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ ও তাঁর পুত্র তেজস্বী যাদব সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন। তবু তাঁরা কিছু বলেননি জোট রাখার স্বার্থে। কারণ, তাঁরা কোনো মন্তব্য করলে দায় তাঁদের ওপরেই পড়ত। খাড়গে বলেন, ‘লালু প্রসাদের কথা আজ সত্যি হলো। সেই সঙ্গে প্রমাণিত হলো, ভারতীয় রাজনীতিতে এখনো বহু আয়া রাম গয়া রাম টিকে আছে।’
বিহার বিধানসভায় মোট আসন ২৪৩। সরকার গড়তে দরকার ১২২ জনের সমর্থন। জেডিইউর রয়েছে ৪৫ বিধায়ক, বিজেপির ৭৮ জন। ওই জোটে আর আছে জিতেন রাম মাজির দল ‘হাম’–এর ৫ জন।
একজন স্বতন্ত্রের সমর্থনও রয়েছে বিজেপির দিকে। ফলে নতুন জোট সরকারের পক্ষে থাকছে ১২৯ জনের সমর্থন। অন্যদিকে আরজেডি ৭৯, কংগ্রেস ১৯ ও বামপন্থীদের ১৬ বিধায়ক মিলে বিরোধী শিবিরে রয়েছে ১১৪ জনের সমর্থন। নীতীশ কুমারকে দলে টেনে বিজেপি চাইবে বিরোধী জোটে ভাঙন ধরাতে যাতে বিধানসভার পরবর্তী ভোট পর্যন্ত সরকার স্থায়ী হয়। যদিও আরজেডি নেতা তেজস্বী বলেছেন, খেলা এখনো বাকি আছে। নীতীশের হাত আরও একবার ধরার ফলে বিজেপি মনে করছে আসন্ন লোকসভা ভোটে বিহারের অধিকাংশ আসন জেতা সহজ হবে।