ভারতে লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে জোট গঠনের লড়াই শুরু

বিজেপি ও কংগ্রেসের লোগো
বিজেপি ও কংগ্রেসের লোগো

লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে পরস্পরবিরোধী জোট গঠনের লড়াই। এই লড়াইয়ের একদিকে রয়েছে শাসক দল বিজেপি, অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

আগামীকাল মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে বিজেপিবিরোধী জোট গড়ার দ্বিতীয় বৈঠক শুরু হচ্ছে। এই বৈঠকের আগে আজ সোমবার রাতে বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী এক নৈশভোজ সভার আয়োজন করেছেন। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এই নৈশভোজ সভায় যোগ দিচ্ছেন বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন ভাতিজা ও সংসদ সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিরোধীদের পাল্টা হিসেবে কাল নয়াদিল্লিতে ডাকা হয়েছে শাসকপন্থী দলগুলোর বৈঠক। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ফলে এখন কোন জোটে কত দল যোগ দেয়, আপাতত চলছে সেই প্রতিযোগিতা।
বেঙ্গালুরুতে বিরোধীদের মূল বৈঠকে কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হবে, তা আজকের নৈশভোজসহ ঘরোয়া আলোচনায় ঠিক করা হবে।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিরোধীদের মঙ্গলবারের বৈঠকে দুটি বিষয় নিশ্চিত করার কথা ভাবা হচ্ছে। একটি হলো নতুন জোটের নাম। অপরটি জোটের অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি। পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপিকে মোকাবিলায় রাজ্যভিত্তিক আসন বণ্টন। কোন ‘ফর্মুলায়’ তা ঠিক করা হবে, সে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে জোটের নাম ও সম্মিলিত কর্মসূচি ঠিক হওয়ার পর। সে জন্য একটি কমিটিও তৈরি করা হতে পারে।

গত মাসে পাটনা বৈঠকের আগে কংগ্রেস ভেবেছিল, তাদের তৈরি ইউপিএ জোটই সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। কিন্তু এতে নতুন দলগুলোর আপত্তি থাকতে পারে ভেবে কংগ্রেস এ নিয়ে চাপাচাপি করেনি। সেই বৈঠকে সিপিআই নেতা ডি রাজার প্রস্তাব ছিল, নতুন জোটের নাম ‘প্রোগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’ (পিডিএ) রাখা হোক। বেঙ্গালুরু বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

বিরোধীদের সম্ভাব্য জোটের অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচিতে প্রাধান্য দেওয়া হবে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক অসাম্য, কৃষক সমস্যা ও বিভাজনের রাজনীতি।
এই বিষয়ে কংগ্রেসের বক্তব্য, কর্ণাটকের সাফল্য দেখাচ্ছে, মানুষ তার দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে জেরবার। মানুষ বিজেপির ঔদাসীন্যে ক্ষুব্ধ।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মনে করেন, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যাকেই বড় করে তুলে ধরতে হবে। তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘বিশ্বগুরু’ মর্যাদা নিয়ে বিজেপি উল্লসিত। সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ-দুঃখ নিয়ে তারা ভাবছে না। বিরোধীদের এই জায়গাটিই তুলে ধরতে হবে। সে জন্য সমমনোভাবাপন্ন সব দলকে জোটবদ্ধ হয়ে একসুরে এগোতে হবে।

কংগ্রেস মনে করে, অর্থনৈতিক দিক থেকে বিজেপি অসফল। তাই সাধারণের মন জিততে এই দিকটির প্রতিই বিরোধীদের বেশি নজর দিতে হবে। সে জন্য রঘুরাম রাজন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশিক বসু এমনকি অমর্ত্য সেনের সুপারিশ নিতে বিরোধীরা আগ্রহী।

আগামী ভোটে বিজেপিকে হারানোই বিরোধীদের মূল লক্ষ্য। বেঙ্গালুরুর বৈঠককে সেই লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়ার এক বড় পদক্ষেপ বানাতে সচেষ্ট বিরোধী নেতারা। এ কারণে ছোটখাটো আঞ্চলিক বিরোধ নিয়ে মাথা না ঘামানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বিরোধ কমিয়ে বিরোধীদের এক জোট করতে সবচেয়ে সদর্থক ও ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে কংগ্রেস। যেমন বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টি (আপ) বলেছিল, কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা না করলে তারা বৈঠকে যোগ দেবে না। দিল্লি সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে কেন্দ্র কিছুদিন আগে ওই অধ্যাদেশ জারি করেছিল। কংগ্রেস প্রাথমিক টালবাহানার পর সেই অধ্যাদেশের বিরোধিতা করবে বলে জানিয়ে দেয়। আপও জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।

একই রকমভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সমালোচনা এড়িয়ে চলছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য কংগ্রেস। মূল দলের পক্ষ থেকে একটাই বার্তা দেওয়া হচ্ছে, দেশের স্বার্থে বিজেপির বিরুদ্ধে এক জোট হওয়া সময়ের দাবি। সেই দাবি পূরণ না হলে কারও অস্তিত্ব থাকবে না। এ কারণে কংগ্রেস একবারের জন্যও জোটের নেতৃত্বদানের দাবি জানাচ্ছে না। বরং সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিচ্ছে।

এদিকে বসে নেই বিজেপিও। তারাও চেষ্টা করছে পুরোনো এনডিএকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে। সেই লক্ষ্যে কাল নয়াদিল্লিতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। তারাও বুঝে গেছে, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২৪ সালের পরিস্থিতির গুণগত পার্থক্য অনেক। বিরোধীদের জোট শক্তির জবাব তাদেরও জোটবদ্ধ হয়েই দিতে হবে।

কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, কম করে হলেও ২৬টি দল বেঙ্গালুরুর বৈঠকে উপস্থিত থাকবে। বিজেপির দিক থেকে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। নানাভাবে তারা চেষ্টা করছে, যাতে কোনো কোনো বড় নেতা এই বৈঠকে না আসেন। তবে সব নেতাই এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বলে তিনি আশাবাদী।