ভারতের ত্রিপুরার আদি ভাষা ককবরকে লিখতে রোমান লিপি ব্যবহারের অনুমতির দাবিতে আগামী সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক ও রেল অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে রাজ্যের আদিবাসী ছাত্রসংগঠন টিপরা ইন্ডিজিনাস স্টুডেন্টস ফেডারেশন (টিআইএসএফ)। টিআইএসএফ ত্রিপুরার প্রধান বিরোধী দল টিপরা মোথার ছাত্রসংগঠন।
গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইএসএফ সভাপতি সাজরা দেববর্মা বলেন, ত্রিপুরা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের (টিবিএসই) সভাপতি ধনঞ্জয় গন চৌধুরী আগে জানিয়েছিলেন, বোর্ডের (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় ককবরক ভাষার পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের রোমান ও বাংলা লিপি—এই দুইয়ের যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। পরে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান এবং শুধু বাংলা লিপিতে পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা দেন। তাঁর এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণেই রাজ্যব্যাপী ধর্মঘটে যেতে হচ্ছে ছাত্রসংগঠনটিকে।
দেববর্মা বলেন, ‘টিবিএসই সভাপতি আমাদের অতীতে আশ্বাস দিয়েছিলেন, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার জন্য রোমান অথবা বাংলা স্ক্রিপ্ট (লিপি) বেছে নিতে পারবে। ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা যাচ্ছে, অতীতে উভয় লিপির ব্যবহার ত্রিপুরায় প্রচলিত ছিল। পরে বোর্ড সভাপতি এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জানান, শুধু বাংলা লিপিতেই পরীক্ষা দেওয়া যাবে।’
টিআইএসএফের সভাপতি বলেন, ‘এর প্রতিবাদে আগামী সোমবার থেকে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক ও রেলপথ অবরোধ শুরু করব। যতক্ষণ না শিক্ষা বিভাগ লিখিতভাবে রোমান লিপি ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে, ততক্ষণ আমরা এই অবস্থানে অনড় থাকব।’
২০২৩ সালে টিপরা মোথা বিপুল পরিমাণে আদিবাসী ভোট টেনে নেওয়ায় ত্রিপুরা রাজ্যে পরাজিত হয় কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া–মার্ক্সবাদী (সিপিআই–এম), জয়ী হয় বিজেপি। প্রথম দিকে সিপিআই–এম আদিবাসী ভোট সরে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত না থাকলেও পরে পর্যালোচনা করে তারা বুঝতে পারে, টিপরা মোথার কারণেই তাদের ভোট কমে গেছে।
টিপরা মোথার প্রধান ত্রিপুরার রাজ পরিবারের প্রতিনিধি প্রদ্যুৎ দেববর্মা রাজ্যের আদিবাসীদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবিতে ভোট পেলেও এখনো বিষয়টি নিয়ে তিনি বিশেষ এগোতে পারেননি। এ নিয়ে ত্রিপুরার আদিবাসীদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভ দানা বাঁধছে।
এ অবস্থায় ত্রিপুরায় কয়েক মাস ধরে স্থানীয় ভাষার আন্দোলন শুরু হয়েছে। সেই আন্দোলনকে তীব্রতা দিতে সোমবার সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ডাক দিল টিপরা মোথার ছাত্রসংগঠন। জরুরি কাজে নিয়োজিত যানবাহনকে এই ধর্মঘটের বাইরে রাখা হয়েছে।