জনপ্রিয় বিশ্বাস যে কোনো ভোটের ‘হাওয়া মোরগ’ হলো শেয়ারবাজার ও সাট্টা মার্কেট। ধারণা সত্য হলে ভারতের লোকসভার ভোটের সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি এখনো বিজেপির পক্ষে অনুকূল হয়ে ওঠেনি। আর সে কারণে ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য মাঠে নামতে হয়েছে অমিত শাহ, নির্মলা সীতারামন, জয়শঙ্করদের। প্রত্যেকেরই অভয়বাণী—ভয় নেই, আগামী ৪ জুনের পর বাজার তেজি হবে।
ভোটের আগের জনমত সমীক্ষাগুলো ভারতের শেয়ারবাজারকে চনমনে করে তুলেছিল। কিন্তু প্রথম দফার ভোটের পর বিজেপির পদস্খলনের সম্ভাবনা মিডিয়ার চর্চায় উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারবাজারে ধস নামতে শুরু করে। গত এক সপ্তাহে বাজার থেকে উবে যায় ১০ লাখ কোটি রুপি।
পাশাপাশি, বিভিন্ন রাজ্যের সাট্টা বাজারও বিজেপি বা এনডিএর ভালো ফলের ইঙ্গিত দিচ্ছে না। হিন্দি বলয়ের প্রতিটি রাজ্যে এসব বাজারে কিছুটা হলেও ভিন্ন দোলাচল দেখা দিচ্ছে। ফলে এমন একটা ধারণার জন্ম হচ্ছে যা গত দশ বছরের শাসকের পক্ষে খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়।
শেয়ারবাজার চাঙা রাখতে মোদি সরকার কিন্তু উঠেপড়ে লেগেছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর মতো করে ব্যাখ্যা করা সত্ত্বেও কাজ না হওয়ায় ভরসা জাগাতে মাঠে নেমে পড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। চতুর্থ দফার ভোটের আগের দিন এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে শাহ বলেন, বাজারের অস্থিরতার সঙ্গে নির্বাচনী ফলের যোগ খোঁজার চেষ্টা বৃথা। বাজার চলে তার নিজস্ব গতিতে। তিনি পরামর্শ দেন, ওই সব ছাইপাঁশ না ভেবে বরং লগ্নিকারীরা এখনই শেয়ার কিনে রাখুন। কম দামে পাবেন। আগামী ৪ জুনের পর বাজার চড়চড় করে চড়বে। তখন বাড়তি মুনাফা লোটার সময়।
শাহ বলেন, কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার হলে শেয়ারবাজারের সূচকের বড় উত্থান ঘটে। সরকার এবার ৪০০ আসন পাবে। আবার গঠিত হবে মোদি সরকার। বাজারও চাঙা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সাধারণত পররাষ্ট্রনীতির বাইরে কথা বলেন না। কিন্তু বাজারের অস্থিরতা তাঁকেও বাধ্য করেছে মুখ খুলতে। গত মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের এক অনুষ্ঠানে তিনি এই প্রথম শেয়ারবাজার নিয়ে মুখ খোলেন। বলেন, বাজার চঞ্চল ঠিকই। কিন্তু আরও একবার ক্ষমতায় এসে মোদি সংস্কারের পথে হাঁটবেন। তিনি আরও একবার স্থিতিশীল ও মজবুত সরকার উপহার দেবেন।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, রাজনৈতিক অস্থিরতার আগাম হদিসের দরুন প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি প্রত্যাহারের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, জয়শঙ্করকে দিয়ে তা রোখার চেষ্টা হচ্ছে। মুম্বাইয়ে তিনি যা বলেছেন, তা বিদেশি লগ্নিকারকদের অভয় দেওয়ার জন্যই।
একমাত্র নরেন্দ্র মোদিই যে বাজারের অস্থিরতা দূর করে অর্থনীতি ঠিক রাখতে পারেন, জয়শঙ্কর সেই কথাই বারবার বোঝাতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, পৃথিবী দ্রুত জটিল হয়ে যাচ্ছে। দুশ্চিন্তা বাড়ছে দিকে দিকে। এ অবস্থা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে না। ঠান্ডা লড়াইয়ের চেয়ে পৃথিবীর হাল খারাপ হবে। সে সময় দুটি বড় দেশ অন্যদের নিয়ন্ত্রণ করত। এখন ১০ থেকে ১৫টি দেশ মাথাচাড়া দিয়েছে। তারা নিজেদের মতো চলছে। কেউ নিয়ন্ত্রণের জায়গায় নেই। এখন পণ্যবাহী জাহাজে গোলা ছোড়া হচ্ছে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় এমন হয়নি। এ অবস্থায় দেশের হাল এমন একজনের ধরা উচিত, যাঁর দূরদৃষ্টি আছে। নীতি আছে। যিনি শক্তিশালী নেতা। তিনি নরেন্দ্র মোদি।
জয়শঙ্কর বলেন, ৪ জুনের পর মোদি সরকার আরও শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে আসবে। দেশবাসী সেদিকেই তাকিয়ে আছে। তখন আরও অনেক বিদেশি লগ্নি আসবে। জয়শঙ্কর বাজারের অস্থিরতা প্রসঙ্গে বলেন, প্রতি পর্বের ভোটের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের চঞ্চলতা কমে যাবে। কারণ, বাজার বুঝতে পারবে কারা সরকার গড়তে চলেছে।