আসামের নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সচিব সাধন পুরকায়স্থ বলেছেন, আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসির কোপে যারা ‘বিদেশি’ তকমা পাচ্ছে, তারা যুগ যুগ ধরে আসামে বসবাস করছে। কেন ওরা বিদেশি হবে? তাঁর প্রশ্ন, রাষ্ট্রহীন এই ১৯ লাখ ভারতীয় কোথায় যাবে?
তাই তিনি মনে করেন, এই অধিকার আদায়ের জন্য শুধু আসাম নয়, দেশব্যাপী এনআরসির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আজ শনিবার বিকেলে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।
সাধন পুরকায়স্থ বলেন, ‘কাছাড় জেলার দুবারের বিধায়ক (এমএলএ) আতাউর রহমান এনআরসির কোপে পড়ে ভারতীয় নাগরিকের তালিকায় নাম তুলতে পারেননি। তাঁকে রাখা হয়েছে বিদেশির তালিকায়। আবার আসামে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর ছেলে ভবতোষ চক্রবর্তী নাম তুলতে পারেননি এনআরসির তালিকায়। এমনই হাজারো মানুষ আসামে যুগ যুগ ধরে বাস করলেও তাদের রাখা হয়েছে বিদেশি তালিকায়। এটা আমরা মানব কীভাবে?’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘অসমিয়ারা এখন নতুন একটি খেলায় মেতেছে। বিদেশি নাগরিক তৈরির খেলা। এটা মানা হবে না। আমরা চাইছি যে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক এনআরসির তালিকায়।
আসামের নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সচিব বলেন, রাষ্ট্রহীন এই ১৯ লাখ ভারতীয়কে এখন দৌড়াতে হবে এনআরসির ট্রাইব্যুনালে। কিন্তু এমন এমন জায়গায় এই ট্রাইব্যুনাল গড়া হয়েছে যে সেখানে একজন গ্রামের গরিব মানুষকে যেতে হবে ১০০-১৫০ কিলোমিটার। একজন গরিব মানুষ কতবার সেখানে যাবে? সব কাজ ফেলে ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দেওয়া সম্ভব? তিনি আরও বলেন, ‘বহু গরিব মানুষ রয়েছে যাদের কাগজপত্র হারিয়ে গেছে, পুড়ে গেছে, বন্যায় ভেসে গেছে অথবা চুরি হয়ে গেছে, তারা কীভাবে জোগাড় করবে কাগজপত্র? তাই তাঁর দাবি, এই মানুষদের পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য গ্রহণ করে ফিরিয়ে দেওয়া হোক নাগরিকত্ব। তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনালে নাগরিকত্ব না পেলে যেকোনো ব্যক্তিকে যেতে হবে হাইকোর্টে। সেখানে ন্যায়বিচার না পেলে ছুটতে হবে সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু কতজন যেতে পারবে দিল্লির সুপ্রিম কোর্টে?
সাধন পুরকায়স্থ আরও বলেছেন,এবার গোটা দেশে এই এনআরসির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিজেপিকে বাদ দিয়ে সব বিরোধী দলকে এই এনআরসির ইস্যুতে এক পতাকাতলে এনে আন্দোলন জোরদার করতে হবে। এই লক্ষ্যে তাঁরা দিল্লি গিয়ে এই আন্দোলন জোরদার করার জন্য বিজেপিবিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
সাধন পুরকায়স্থ বলেন, আসামে কোনো বিদেশি নেই। যারা আছে তারা সবাই ভারতীয়। তাই এসব ভারতীয়কে ট্রাইব্যুনালের নামে হয়রানি তাঁরা মেনে নেবেন না।