ভারতে বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে মাওবাদী ষড়যন্ত্রে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে। মঙ্গলবার ভারতের পাঁচটি শহরে ব্যাপক তল্লাশি চালায় পুলিশ। খোঁজ করা হয় নয়জন বুদ্ধিজীবী ও অধিকারকর্মীর। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচজনকে। এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ভারতের বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদেরা। তাঁরা বলছেন, এটি একধরনের ‘জরুরি অবস্থা’।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, তল্লাশি অভিযান ও গ্রেপ্তার চালিয়েছে পুনে পুলিশ। গত জানুয়ারিতে ভিম কোরেগাঁওয়ে দলিত সম্প্রদায় ও মারাঠার উচ্চবর্ণের মানুষের মধ্যকার সংঘর্ষের সূত্র টেনে অভিযোগ, এসবে উসকানি দিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা। মাওবাদী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও আনা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন: কবি ও মানবাধিকারকর্মী ভারাভারা রাও, আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ, অরুণ ফেরেইরা, গৌতম নাভলাখা ও ভেনন হনজালভেস। দিল্লি, ফরিদাবাদ, গোয়া, মুম্বাই, রাঁচি ও হায়দরাবাদে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ভারাভারা রাওকে গ্রেপ্তার করেছে হায়দরাবাদ থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ফরিদাবাদে নিজের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন সুধা ভরদ্বাজ। অরুণ ফেরেইরা ও ভেনন গনজালভেসকে যথাক্রমে থানে ও মুম্বাই থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গৌতম নাভলাখা গৃহবন্দী রয়েছেন।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, মারাঠা পেশোয়াদের বিরুদ্ধে জয়কে ‘বিজয় দিবস’ পালন করতে গত ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের ভিমা কোরেগাঁও এলাকায় গোটা রাজ্য থেকে জমায়েত হন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন। সেখানেই উচ্চবর্ণের সঙ্গে দলিতদের সংঘর্ষ হয়। দলিতদের ডাকে মহারাষ্ট্রে বনধ ডাকা হয়। এতে তিন দিন অচল ছিল মহারাষ্ট্র। ওই ঘটনার তদন্তেই এই ধরপাকড় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী ও সমাজকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতের নাগরিক সমাজ। বিশিষ্ট লেখক রামাচন্দ্র গুহ এনডিটিভিকে বলেন, ‘অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, মহাত্মা গান্ধী বেঁচে থাকলে তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হতো।’ তাঁর দাবি, এই গ্রেপ্তারের ফলে আদিবাসীদের পক্ষে কথা বলার কেউ রইল না। রামাচন্দ্রের মতে, ভারতে এমন দমনপীড়ন শুরু করেছে কংগ্রেস। বর্তমান সরকার সেই ধারাবাহিকতাই রক্ষা করছে।
বুকার পুরস্কারজয়ী লেখিকা অরুন্ধতী রায় এই গ্রেপ্তারকে ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘জরুরি অবস্থা ঘোষণার খুব কাছে চলে এসেছে এটি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গোরক্ষার নামে যাঁরা গণপিটুনি দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে এবং উসকানি দিচ্ছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করা উচিত।’