বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার প্রত্যয় নিয়ে কলকাতায় যাত্রা শুরু করেছে ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বিনিময়কেন্দ্র। ধর্মের নামে হিংসা, আঞ্চলিকতাবাদ, জাতিগত বিদ্বেষ, বিশ্বজুড়ে সহিংসতা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির বাণী শোনানো ও একটি প্রেমময় পৃথিবী গড়ার প্রত্যয়ে এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় কবিগুরুর স্মৃতিবাহী জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির উদয়শঙ্কর মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন কবি ও চিত্রশিল্পী জামাল হোসেন। আর সম্পাদক অধ্যাপক চিত্ত মণ্ডল।
সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দেন কলকাতা ও বাংলাদেশের বিশিষ্টজনেরা। বাংলাদেশ থেকে যোগ দেন একঝাঁক কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে সংগঠনের সভাপতি জামাল হোসেন বলেন, নবগঠিত ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বিনিময়কেন্দ্র হলো সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। মতবিনিময়ের একটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের সব বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যের মাধ্যমে নিজেদের চিন্তা-চেতনা-ভাবনার নানা চিত্র তুলে ধরতে পারবে। মানুষে-মানুষে বন্ধুত্ব আর এক অসাম্প্রদায়িক, প্রেমময় ও সন্ত্রাসহীন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারবে।
সংগঠনের সম্পাদক চিত্ত মণ্ডল বলেন, দুই দেশসহ বিশ্বের বাংলাভাষী মানুষের সঙ্গে এক নতুন ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ। এর লক্ষ্য, বন্ধুত্ব দৃঢ় করা। সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার করা।
সংগঠনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায় চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা রজতাভ দত্ত, কবি বীথি চট্টোপাধ্যায় ও সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী।
উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায় চৌধুরী বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বিনিময়কেন্দ্র গঠনের মধ্য দিয়ে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও জোরদার হবে। আমরা পরস্পর আরও কাছাকাছি আসতে পারব। আমাদের নৈকট্য বাড়বে। দৃঢ় হবে সংস্কৃতির বন্ধন।’
কবি বীথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলাদেশ আর আমাদের ভাষা এক। আমরা বাংলায় কথা বলি। এই সাংস্কৃতিক বিনিময়কেন্দ্র আমাদের দুই দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।’
অভিনেতা রজতাভ দত্ত বলেন, ‘আমার মা-বাবা তো ওখানের (বাংলাদেশ) ছিলেন। আমি এখানের হলেও আমার নাড়ির টান রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। আর মীরাক্কেলের বিচারক হয়ে আমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল কত বাংলাদেশি শিল্পীর। তাই তো ঢাকায় গেলে ওদের সান্নিধ্যে আমি আবেগে হারিয়ে যাই। কেউ আমাকে ছাড়তে চান না। তাই আজও আমার মনে বাংলাদেশ বহমান।’
সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী স্মৃতিচারণা করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের। তিনি বলেন, ‘তখন আমি আমার পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কত লেখাই লিখেছি। আজ যেন সেই সব স্মৃতি নতুন করে উঁকি মারছে। স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কত জানা-অজানা স্মৃতি। নতুন গড়া এই সংগঠন সেই সব স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে রাখবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকজন কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন বাংলাদেশের কবি সাইফুল্লাহ আল মামুন, কবি ওবায়েদ আকাশ, কবি রাহেল রাজীব ও কবি মনিরুজ্জামান মিন্টু। সম্মাননাপ্রাপ্ত কবি অনিকেত শামীম ও কবি শিহাব শাহরিয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। আরও সম্মাননা পান ভারতের কবি কাজল চক্রবর্তী, কবি মানিক দে, কবি কাকলি ঘোষ ও নৃত্যশিল্পী শিল্পী বারুরী।
অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন দুই দেশের কবিরা। তাঁরা হলেন শমিত সান্যাল, মুস্তাক আহমেদ, প্রভাত চৌধুরী, ফিরোজ হোসেন, শ্রাবণী পাত্র, সমরেশ চৌধুরী, আলো বসু প্রমুখ।
আবৃত্তি করেন ঋত্বিক ব্যানার্জি, সৌমিত্র ঘোষ, অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, বিপ্লব মণ্ডল, সুলগ্না ব্যানার্জি, শর্মিষ্ঠা পাল, সৌমশ্রী প্রমুখ।
সংগীতে অংশ নেন আর্য শাওন ভট্টাচার্য, তৃণা ঘোষ, শর্বরী সেন, সাবিনা ইয়াসমীন, জিশা সিংহ রায় প্রমুখ।
কবিতার গানে অংশ নেন মৌসুমী হোসেন। কবিতার নৃত্যে অংশ নেন মনিরা পারভীন। পুরো অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন অরিজিৎ বসু।