ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখনো থমথমে। যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, তা শিথিল করা হয়নি। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কাশ্মীরি রাজনীতিকসহ ৫৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভারত সরকারের জন্য দুশ্চিন্তার খবর আসতে শুরু করেছে কেন্দ্রশাসিত লাদাখের কারগিল থেকে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ ও রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়ায় শিয়া সংখ্যাগুরু এ অঞ্চলে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শহরে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির ব্যানার নিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিন শতাধিক লোক বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেখান থেকে। বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভের খবর আসতে শুরু করেছে উপত্যকার বিভিন্ন অংশ থেকেও। বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ব্যবসায়ী নেতা এবং অধিকারকর্মী রয়েছেন। অন্যদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, প্রায় ৩০০ কাশ্মীরি রাজনীতিবিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনমন এবং বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর পাকিস্তানকে তা পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। এর জবাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশী বলেছেন, ভারত তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করলে তাঁরাও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করবেন।
এসবের মধ্যে সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা সমাবেশ বাড়িয়েছে পাকিস্তান। গতকাল দুই দেশের মধ্যে চলা সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলও বন্ধ করেছে দেশটি। ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্তের সাফাই গাইলেন মোদি
বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর বিক্ষোভ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার মুখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন, সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ মুক্ত করতেই জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করা হয়েছে।
কাশ্মীর ইস্যুতে গতকাল রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শিগগিরই বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়ে মোদি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের প্রতি আমার এই বিশ্বাস আছে, বিচ্ছিন্নতাবাদ পরাজিত হলে নতুন আশা–আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তাঁরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন। কাশ্মীরে মানুষদের জন্য আরও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করতে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগ নেবে।’
নরেন্দ্র মোদি বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে পাকিস্তান। সেখানকার মানুষের আবেগ ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে তারা। দুর্নীতি, বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ, স্বজনপ্রীতি ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি এই বিশেষ মর্যাদা।
অবরুদ্ধ কাশ্মীরের জনতার উদ্দেশে মোদি বলেন, ‘আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে, সমস্যার সমাধান হবে। ঈদ উদ্যাপনে কোনো বাধার সম্মুখীন হবে না কাশ্মীরের নাগরিকেরা।’
বন্দিদশার দরুন উপত্যকায় রাজনৈতিক কাজকর্ম সব বন্ধ। জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে কারফিউ প্রত্যাহার করা হবে।