পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতাল ছেড়েছেন। দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের বাড়িতে চলছে চিকিৎসা। বাঁ পায়ে রয়েছে প্লাস্টার। সঙ্গী হুইলচেয়ার। আপাতত বাড়ি থেকেই কাজ করার পরামর্শ চিকিৎসকদের। তবে নির্বাচনের প্রাক্কালে ঘরে বসে থাকতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী। সোমবার নামছেন প্রচারে। হুইলচেয়ারে বসেই নির্বাচনী সভায় অংশ নিতে যাবেন ঝাড়গ্রাম জেলায়।
মমতা বলেছেন, ‘আঘাত, যন্ত্রণা—সবকিছুর পরও মানুষের কাছে গিয়ে আমাকে দাঁড়াতে হবে। কারণ, এবারের নির্বাচন একটি বড় রাজনৈতিক সংগ্রাম। সেখানে মানুষই আমার শক্তি। তাই নিজের কষ্ট থেকে মানুষের কাছে পৌঁছানো আমার কাছে বেশি জরুরি।’
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থ মমতাকে ঝাড়গ্রামে নিয়ে যেতে গাড়িতে হুইলচেয়ারে বসার বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। সভামঞ্চে হুইল চেয়ারেই বসবেন তিনি। সেখানে বসেই বক্তব্য দেবেন। এটাই হবে অসুস্থ হওয়ার পর মমতার প্রথম নির্বাচনী প্রচার সভা।
এর আগে আগামীকাল রোববার কালীঘাটের বাড়িতে বসে তৃণমূলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন মমতা। গতকাল শুক্রবার তৃণমূলের নির্বাচনী ইশতেহার নন্দীগ্রাম থেকে প্রকাশ করার কথা ছিল। মমতার অসুস্থতার কারণে তা বাতিল হয়। আগামীকাল ‘নন্দীগ্রাম দিবসে’ মমতা ইশতেহার প্রকাশ করবেন।
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে বামফ্রন্ট সরকার ২৭ হাজার একর জমি রসায়ন শিল্প অঞ্চল গড়ার জন্য অধিগ্রহণের উদ্যোগ দিলে খেপে ওঠেন এলাকার মানুষ। এগিয়ে আসেন মমতা। গড়ে তোলেন তুমুল আন্দোলন। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট দুর্গ ভেঙে দেয়। বিধানসভা নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা।
২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ১৪ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়। সেই দিনকে স্মরণ করতে প্রতিবছর দিনটিতে নন্দীগ্রাম দিবস পালন করে তৃণমূল। এবার এ দিনকেই দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের দিন হিসেবে বেছে নিয়েছেন মমতা।
এবারের নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার আলোচিত নন্দীগ্রাম আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন মমতা। গত বুধবার নন্দীগ্রামে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে একাধিক মন্দির পরিদর্শন করেন মমতা। সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি মন্দির থেকে ফেরার পথে তাঁর ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তাঁকে দ্রুত কলকাতায় ফিরিয়ে এনে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গঠন করা হয় ৬ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। বাঁ পায়ে প্লাস্টার করা হয় তাঁর।
শুক্রবার দুপুরে চিকিৎসকেরা জানান, মমতা সুস্থ আছেন। পায়ের ফোলা অনেকটাই কমেছে। কমেছে শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথাও। এরপর সন্ধ্যায় মমতা চিকিৎসকের ছাড়পত্র নিয়ে হুইল চেয়ারে বসে বাড়ি ফেরেন। এ সময় তাঁর বাঁ পায়ে প্লাস্টার ও বিশেষ জুতা দেখা যায়।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিতে পারবেন মমতা। বিশ্রামে থাকতে হবে।
তবে মমতা শুয়ে–বসে থাকার মানুষ নন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কর্মীদের উদ্দেশে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তিনি। বাড়ি ফিরেই নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন।