নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের ওপর দাঁড়িয়ে বাঙালির আত্মপরিচয়। ‘বাঙালি’ পরিচিতির মধ্যে হিন্দু-মুসলিম উভয়ের বৈশিষ্ট্য এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে এই পরিচিতিকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাঙা অসম্ভব।
গতকাল মঙ্গলবার কলকাতার রবীন্দ্র সদনে ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কলকাতার উদ্যোগে আয়োজিত ‘অন বিইং আ বেঙ্গলি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন অমর্ত্য সেন।
অমর্ত্য সেন বলেন, বাংলার ভাষা, স্থাপত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস—সবই হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আর বাঙালির আত্মপরিচয়ে এই সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এই অর্থনীতিবিদ রবীন্দ্রনাথ-নজরুল থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে তাঁর সুচিন্তিত মত প্রকাশ করেন। কথা বলেন ভারতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও। এ প্রসঙ্গে অসহিষ্ণুতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। অমর্ত্য সেন বলেন, ‘হিংসা, ঘৃণার পরিবেশের প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। নতুন ভারতে যা বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই আজ এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। গণতন্ত্রে হিংসার স্থান নেই, সে কথাই বোঝাতে হবে সবাইকে।’
অমর্ত্য সেন বলেন, বিভেদকামী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির আক্রমণে বাংলায় রক্তক্ষয়ী হিংসা দানা বাঁধতে পারে। তবে বাংলায় সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে যে বহুমাত্রিকতা রয়েছে, তা এই বিভেদকামী হিংসার শক্তিকে অবশ্যই পরাস্ত করতে পারবে। তবে তাতে একটু সময় লাগবে।
অমর্ত্য সেন জোরের সঙ্গে বলেন, ‘গণতন্ত্রের অর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ শক্তির আস্ফালন নয়।’
আলোচনা সভায় কলকাতার বিশিষ্টজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা-অধিকর্তা অধ্যাপক অমিয় কুমার বাগচি, বলিউড অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, রাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার প্রমুখ।