ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশি হিন্দু অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিতে চাওয়ায় সমালোচনা ঝড় বইছে গোটা উত্তর–পূর্ব ভারতে। এমনকি বিজেপির জোট শরিকেরাও এই ঘোষণার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
গতকাল শুক্রবার আসামের শিলচরে দলীয় প্রচারে এসে মোদি ঘোষণা করেন, সংসদে পাস করানো হবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৬। একই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা, নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) থেকে কোনো ভারতীয়ের নাম বাদ যাবে না।
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৬ এখন যৌথ সংসদীয় কমিটির বিবেচনাধীন। বিলটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের আগে অনুপ্রবেশকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিষ্টানদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। মুসলিমদের অবশ্য তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। বহুদিন ধরেই বিলটির বিরোধিতা চলছিল আসামসহ গোটা উত্তর–পূর্ব ভারতে। গতকাল মোদির ঘোষণার পর কংগ্রেস, সিপিএমসহ প্রায় সব আঞ্চলিক দলই বিলটির বিরোধিতায় সরব।
মোদির ঘোষণা প্রসঙ্গে সিপিএম সাংসদ জিতেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চকেই ভিত্তি বছর ধরতে হবে। জাতপাতের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বরদাশত করব না।’ একই সঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, ‘বিজেপি বিলটি পাস করাতে না পারলেও হিন্দু ভোট পাওয়ার লোভে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছে। বিলটি সর্বনাশ ডেকে আনছে উত্তর–পূর্বাঞ্চলে।’
আসামের কংগ্রেস নেতা পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নোংরা রাজনীতি করছেন মোদিজি। তাঁর জুমলাবাজির (ভাঁওতাবাজি) জন্য হিন্দু-মুসলিম সবাই আজ বিপাকে পড়তে চলেছেন।’
আসামের বিজেপি জোট শরিক অসম গণপরিষদ (অগপ) বা ত্রিপুরার জোট শরিক আইপিএফটিও বিলের বিরোধিতায় সরব।
অগপ নেতা, তথা রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লকুমার মহন্ত মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসাম চুক্তির বিরোধী কোনো কিছু বরদাশত করা হবে না।’
আসামে আন্দোলন থামাতে ভারতের প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সময়ে স্বাক্ষরিত চুক্তিতেও ১৯৭১–এর ২৫ মার্চকেই ভিত্তি বছর ধরার কথা বলা হয়েছে।
আইপিএফটি নেতা অনন্ত দেববর্মা প্রথম আলোকে বলেন, দেশভাগের কারণে এমনিতেই বাংলাদেশি গিজগিজ করছে ত্রিপুরায়। উপজাতিরা বিপন্ন।
আসামের জঙ্গি সংগঠন উলফা বা ত্রিপুরার এটিটিএফও মোদির ভাষণের কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। সব মিলিয়ে উত্তর–পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব অবিজেপি দলই অখুশি নরেন্দ্র মোদির শিলচর ভাষণে।