সিবিআই এখন বিবিআই: মমতা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিবিআই) অন্তঃকলহের ঢেউ দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনেও এসে লেগেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইটে সিবিআইকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেছেন, সিবিআই (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) এখন তথাকথিত বিবিআই (বিজেপি ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) হয়ে গেছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

গতকাল বুধবার মমতা এই মন্তব্য করেন। মমতার ইঙ্গিত, সিবিআইর অভ্যন্তরীণ বিরোধের পেছনে দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার। অতীতেও সিবিআইকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা।

সিবিআইয়ের একটা সুনাম আছে দেশজুড়ে। মানুষ এই সংস্থার ওপর ভরসা করে আসছে। তারা মনে করে, সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত গেলে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে। সেই সংস্থায় এখন শুরু হয়েছে অন্তঃকলহ।

সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার মধ্যে চলছে বিবাদ। এই সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে সংস্থার দায়ের করা ঘুষ ও দুর্নীতির মামলা থেকে মূলত এ বিবাদের সূত্রপাত।

আস্থানা গুজরাট ক্যাডারের শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আস্থাভাজন।

অন্যদিকে আস্থানার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের প্রধান অলোক ভার্মার অবস্থান ভালো চোখে নেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার।

ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে ভারতের রাজনীতি যখন উত্তাল, তখন সিবিআইয়ের প্রধান ভার্মা অতি সক্রিয় হয়ে এ নিয়ে তদন্তে নেমে পড়েন। তিনি কাগজপত্র সংগ্রহ শুরু করেন। তাঁর এই তৎপরতাকে ভালোভাবে নেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার।

আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতি মামলা দায়েরের পর তাঁকে গ্রেপ্তারে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আরজি জানিয়েছিলেন ভার্মা। তবে তাতে সাড়া মেলেনি। আস্থানাকে গ্রেপ্তারের অনুমতি দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার; বরং আস্থানা উচ্চ আদালত থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ পান।

সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার মধ্যকার বিরোধে ইতি টানা এবং সংস্থার ভাবমূর্তি ধরে রাখতে ভার্মা ও আস্থানাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সিবিআইয়ের প্রধান হিসেবে দেবেন্দ্র কুমারকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এসব ঘটনার পর দেশজুড়ে সিবিআইয়ের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ে। সিবিআই ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় ওঠে।

কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল এ ঘটনায় মুখর। সিবিআইকে বিজেপির অস্ত্র করার অভিযোগ বিরোধীদের। মমতাও একই অভিযোগ তুলেছেন।

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেছেন, সিবিআইয়ের দুই কর্তার বিবাদের জেরে ভিজিল্যান্স কমিশনের বৈঠকে তাঁদের ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্তে স্বচ্ছতা রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় সরকারের এসব যুক্তি মানছেন না বিরোধী দলের নেতারা।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, সিবিআই কর্তা ভার্মার অপসারণের সঙ্গে রাফাল ইস্যুর যোগসূত্র দেখতে পারছেন তিনি। রাফাল নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ভার্মাকে সরিয়ে দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। আজ বড় বিপদের মুখে দেশ ও দেশের সংবিধান।

আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, কোন আইনে এই উদ্যোগ নিলেন প্রধানমন্ত্রী? কী লুকাতে চাইছেন তিনি? তবে কি ভার্মার অপসারণের সঙ্গে রাফালের কোনো যোগসূত্র রয়েছে?

সিপিএমের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত বেআইনি।