তালিকায় না থাকলেও ভারতের জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসে মরিয়া বিজেপি। এমনটাই আশঙ্কা বিজেপির শরিক দলগুলোর। তাই দিল্লিতে উত্তর–পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক দলগুলো একযোগে বিলটি রাজ্যসভায় পাস আটকাতে দরবার করে চলেছে। চলছে বিক্ষোভও। এরই মধ্যে ৮ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের উত্তর–পূর্ব ভারত সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিম শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে ভারতীয় রাজ্যসভার অনুমোদন জরুরি। গত ৮ জানুয়ারি লোকসভায় অবশ্য বিলটি পাস হয়ে গিয়েছে। তবে রাজ্যসভার চলতি অধিবেশনে বিলটি বিবেচনার জন্য তালিকায় রাখা হয়নি। লোকসভা নির্বাচনের আগে সংসদের শেষ অধিবেশনে উত্থাপিত না হলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বিতর্কিত এই বিলের ভবিষ্যৎ। কিন্তু বিলবিরোধীদের আশঙ্কা, তালিকায় না থাকলেও লোকসভার মতোই রাজ্যসভাতে অতিরিক্ত তালিকায় এনে পাস করানোর চেষ্টা হতে পারে। তবে রাজ্যসভায় বিজেপির নিজের জোরে আইন সংশোধনের ক্ষমতা নেই।
আর এটা বুঝতে পেরেই কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে দরবার করছে উত্তর–পূর্বাঞ্চলে বিজেপির শরিক বিভিন্ন আঞ্চলিক দল। তাদের এই প্রয়াসে বিহারের জেডিইউ, পাঞ্জাবে আকালি দল, মহারাষ্ট্রের শিবসেনাও সমর্থন জানিয়েছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনার্ড সাংমার নেতৃত্বে আঞ্চলিক দলগুলো দিল্লিতে নিজেদের সমর্থনে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও তারা বৈঠক করতে চায়।
আঞ্চলিক দলগুলোর যৌথ মঞ্চের অন্যতম সদস্য তথা ত্রিপুরার উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবারকুমার জামাতিয়া মোবাইলে দিল্লি থেকে প্রথম আলোকে জানান, ‘নাগরিকত্ব বিল প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। রাজ্যসভায় যাতে কোনো অবস্থাতেই বিলটি পাস হতে না পারে, তার জন্য সবাইকে বোঝাচ্ছি আমরা। সাড়াও মিলছে ভালোই।’
প্রসঙ্গত, মেবারকুমার ত্রিপুরার আঞ্চলিক দল তথা বিজেপির শরিক আইপিএফটির সাধারণ সম্পাদক। আইপিএফটির মতোই আসাম গণপরিষদও (অগপ) নাগরিকত্ব বিল প্রত্যাহারের দাবিতে বিজেপিবিরোধী অবস্থানে অনড়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, বিজেপির সঙ্গে এখনই ফের জোটবদ্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রসঙ্গত, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিতর্কের জেরেই আসাম মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপির জোট ছিন্ন করে অগপ।
শরিক দলগুলোর এই অবস্থানের পাশাপাশি আসামে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছেই। প্রায় প্রতিদিনই কালো পতাকা দেখানো হচ্ছে নেতাদের। রাজধানী গুয়াহাটিতে উলঙ্গ নৃত্যও চলছে নিয়মিত। জঙ্গি সংগঠন উলফার আলোচনাপন্থীদের নেতা অনুপ চেটিয়া অবশ্য মনে করেন, বিজেপি বিল পাসের চেষ্টা না করলে আন্দোলনের ঝাঁজ কমবে। প্রথম আলোর কাছে তাঁর দাবি, ‘রাজ্যজুড়ে আন্দোলনের বহর দেখে ভয় পাচ্ছে বিজেপি।’
এদিকে অশান্ত আসামসহ গোটা উত্তর–পূর্বাঞ্চলে ৮ ফেব্রুয়ারি দুই দিনের সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আসাম, অরুণাচল প্রদেশ ও ত্রিপুরায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের কথা তাঁর। পাশাপাশি দলের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা মোদির। তবে শরিকদের সঙ্গে আলোচনার কোনো সম্ভাবনা এখনো নেই বলে বিজেপি সূত্রের খবর। অন্যদিকে মোদির সফরকালে কালো পাতাকা দেখানোর কর্মসূচি নিয়েছে ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিত সিনহা প্রথম আলোকে জানান, প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখিয়ে স্বাগত জানানো হবে। সেই সঙ্গে কংগ্রেস ভবন থেকে ওড়ানো হবে কালো বেলুন।