রতন টাটা। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একজন শিল্পপতি। সহজ-সরল জীবনযাপনের জন্য যাঁর খ্যাতি পৃথিবীজোড়া। গত ২৮ ডিসেম্বর ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করেছেন তিনি। সাদামাটাভাবে তাঁর জন্মদিন উদ্যাপনের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, রতন টাটা একটি চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর সামনে ছোট একটি কেক রাখা। ওই কেক কেটে জন্মদিন উদ্যাপন করেন তিনি। তখন পাশে থাকা এক তরুণ তাঁকে কেক খাইয়ে দেন।
সামনে থাকা ছোট মোমবাতি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে রতন টাটা কেক কাটেন। তারপর পাশে বসে থাকা এক তরুণ রতন টাটার কাঁধে হাত রাখেন। এরপরই ওই তরুণ পাশে বসে পড়েন। এক টুকরা কেক ভেঙে টাটাকে খাওয়ান। টাটার পিঠও চাপড়ে দেন। ভিডিও দেখে অনেকে সাদামাটা জন্মদিন উদ্যাপনের জন্য টাটার প্রশংসা করছেন।
রতন টাটার এ রকম ঘটনা নিয়ে আগেও নেটিজেনরা সরব হয়েছেন। তবে এবার ভিডিওটি দেখার পর বেশির ভাগ মানুষ একটি প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের আগ্রহের কেন্দ্রে রতন টাটার সাদামাটা জন্মদিন উদ্যাপনে তাঁর একমাত্র সঙ্গী ওই তরুণ। তবে অবাক করার হলেও ছেলেটি রতন টাটার পরিবারের কেউ নন। এ জন্য হয়তো টাটার সঙ্গে জন্মদিন উদ্যাপনের পর তাঁর পরিচয় জানতে অনেকে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। টাটার সঙ্গে তরুণের অবশ্য বিশেষ এক সম্পর্ক রয়েছে।
ওই তরুণের নাম শান্তনু নাইডু। রতন টাটার ব্যক্তিগত সহকারী। তরুণদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব রতন টাটা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই তাঁর বক্তৃতা ও জীবন নিয়ে তৈরি গল্প ভাইরাল হয়। কিন্তু রতন টাটা শান্তনু নাইডুতে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এরপরই তাঁকে নিজের ব্যক্তিগত সহকারী করেন।
কুকুরের প্রতি রতন টাটার ভালোবাসার কথা সর্বজনবিদিত। প্রায়ই তিনি তাঁর কুকুর নিয়ে কথা বলেন। মুম্বাইয়ে টাটা গোষ্ঠীর যে সদর দপ্তর রয়েছে, সেখানে নেড়ি কুকুরের জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। রতন টাটার সঙ্গে মুম্বাইয়ের তরুণ শান্তনু নাইডুর সম্পর্কের শুরুও এই কুকুরকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া একটি ঘটনার পর।
২০১৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষে টাটা গ্রুপে যোগ দেন তরুণ শান্তনু নাইডু। হঠাৎ একদিন পথে একটি কুকুর মরে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। এতে খুব ব্যথিত হন শান্তনু। দুর্ঘটনার হাত থেকে কুকুরদের বাঁচাতে বিশেষ ধরনের কলার তৈরি করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। একটি চকচকে কলার তৈরিও করেন। এতে দূর থেকে দেখেই কুকুর শনাক্ত করতে পারবেন চালকেরা। কুকুরদের বাঁচাতে শান্তনুর এমন উদ্যোগের গল্প নিয়ে লেখা প্রকাশ হয়েছিল টাটা গ্রুপের একটি নিউজলেটারে।
এখানেই গল্পের শেষ নয়; কুকুরের প্রতি শান্তনু নাইডুর প্রেম ও দুর্ঘটনা থেকে কুকুরদের বাঁচাতে তাঁর নেওয়া উদ্যোগ দেখে মুগ্ধ হন রতন টাটা। ওই ঘটনার কয়েক দিন পর রতন টাটা সরাসরি শান্তনুকে ফোন করেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করার আগ্রহের কথা জানান। এ প্রসঙ্গে শান্তনু বলেন, ‘তিনি (রতন টাটা) আমাকে বলেন, আমার কাজ দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন। এরপর যেখানে তাঁর কুকুরগুলো রয়েছে, সেখানে আমাকে নিয়ে যান তিনি। আমাদের বন্ধুত্বের শুরুটা হয়েছিল এভাবেই।’
শান্তনু নাইডু আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। এমবিএ করে ভারত ফেরেন। এরপরই টাটা ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের অফিসে উপমহাব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
রতন টাটা ১৯৯০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন। এরপর ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি টাটা গ্রুপের অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এখন তিনি টাটা ট্রাস্টের দায়িত্ব পালন করছেন। তথ্যসূত্র: ইকোনমিক টাইমস, টুইটার