মমতা হাসপাতালেই আছেন, বসছে মেডিকেল বোর্ড

কলকাতার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে হামলায় আহত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাঁর এখন শুধু পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা। তবে প্লাস্টার করা আছে বাঁ পায়ে। এ অবস্থায় তাঁর চিকিৎসায় গঠিত কলকাতার পিজি হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড আজ শুক্রবার সকালে বৈঠকে বসছে। শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে তাঁকে এখনই হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে তারা।

এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচার বন্ধ করবেন না। হুইল চেয়ারে বসেই এতে অংশ নেবেন। মমতা আগামীকাল শনিবার এবং পরশু রোববার পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় ইতিমধ্যে ঘোষিত তাঁর ৫টি প্রচারসভা বাতিল করেছেন। এসব সভার তারিখ নতুন করে নির্ধারণ করা হবে।

গত বুধবার নন্দীগ্রাম আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে বিধানসভা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বিভিন্ন মন্দির ঘুরে ফেরার পথে নিজের গাড়ির দরজায় আঘাত পেয়ে আহত হন তিনি। ঘটনার পরপরই তিনি অভিযোগ করেন, ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন তাঁকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। এ সময় সেখানে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন না। এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে বিভিন্ন দল।  

এদিকে মমতার ওপর কথিত হামলার প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস আজ বিকেলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যজুড়ে কালো পতাকা হাতে ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করবে। ইতিমধ্যে, গতকাল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নির্বাচন দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, আজ শুক্রবারের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ওই ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে।

অন্যদিকে আজ মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন। বিরাট মিছিলযোগে বিকেলে হলদিয়ার মহকুমা প্রশাসকের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন তিনি।

টালিগঞ্জ আসনেও লড়তে পারেন মমতা
পশ্চিমবঙ্গজুড়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে, নন্দীগ্রামের পাশাপাশি মমতা দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এ নিয়ে ইতিমধ্যে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে তৃণমূলে। মমতা দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর আসনের বিধায়ক হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদে আছেন। এবার ভবানীপুর আসনে না লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি আসনটি দলের প্রবীণ নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে ছেড়ে দিয়েছেন। আর নিজে লড়বেন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম আসনে।

নন্দীগ্রামের বর্তমান বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীই ফের লড়ছেন এ আসনে। লড়ছেন মমতার বিরুদ্ধেই। যদিও শুভেন্দু একসময় তৃণমূলে মমতার খুব কাছের মানুষ ছিলেন। গত ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেন।

শুভেন্দু আগেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন, এই আসনে তিনি ৫০ হাজার ভোটে মমতাকে হারিয়ে দেবেন। যদিও এই চ্যালেঞ্জে পাত্তা না দিয়ে তৃণমূল বলেছে, এ আসনে বিপুল ভোটে জিতবেন মমতাই। এর মধ্য দিয়ে তিনি তৃতীয়বারের মতো এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। রাজনৈতিক মহলের ভাবনা, মমতা সহজে জেতার জন্য এবার তাঁর দ্বিতীয় পছন্দের আসন টালিগঞ্জে লড়তে পারেন। টালিগঞ্জের কাছেই মমতার কালীঘাটের বাসভবন।

২০১৬ সালের সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা জিতেছিলেন ভবানীপুর আসনে। পেয়েছিলেন ৪৫ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৪৩ দশমিক ১৬ শতাংশ আর তৃতীয় স্থানে থাকা সিপিএম পেয়েছিল ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ ভোট। ওই নির্বাচনে টালিগঞ্জে তৃণমূল পেয়েছিল ৪২ শতাংশ ভোট। সিপিএম ৩১ আর বিজেপি ২৪ শতাংশ ভোট। ফলে নিরাপদ আসন বিবেচনায় টালিগঞ্জে মমতাকে প্রার্থী করার ওই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।

নন্দীগ্রামে ভোট হবে আগামী ১ এপ্রিল। আর টালিগঞ্জে ১০ এপ্রিল। টালিগঞ্জ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৩ মার্চ।