ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৩০০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদিত হলো। আজ মঙ্গলবার সফরের দ্বিতীয় দিনে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আরও তিনটি অনু সমঝোতা সই হয়। বাণিজ্য চুক্তি যে এই সফরে অধরা থাকছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা আগেই জানিয়েছিলেন।
হায়দরাবাদ হাউসে আজ এক যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাশে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘সার্বিক বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে দুই দেশ অনেকটাই এগিয়েছে। আমি আশাবাদী, আগামী দিনে দুই দেশের পক্ষেই গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি আমরা করতে পারব।’ ট্রাম্প আরও বলেন, তাঁর গত চার বছরের শাসনে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি ৬০ শতাংশ বেড়েছে। উচ্চমানের মার্কিন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির (এনার্জি) রপ্তানি বেড়েছে ৫০০ গুণ।
প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত অত্যাধুনিক সামরিক সম্ভার কিনবে। সেগুলোর মধ্যে থাকবে অ্যাপাচি ও এমএইচ-৬০ রোমিও হেলিকপ্টার। এ ছাড়া যে তিনটি অনু চুক্তি হয়েছে, তার একটি মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত। অন্য দুটির একটি চিকিৎসা পণ্যের নিরাপত্তা, অন্যটি জ্বালানি ক্ষেত্রে। ভারতের ইন্ডিয়ান ওয়েল করপোরেশনের সঙ্গে অনু চুক্তি হয়েছে মার্কিন সংস্থা একসন মোবিলের।
ট্রাম্প দুই দিনের ভারত সফর শুরু করেন সোমবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে। সেই সংবর্ধনার অভিভূত ও আচ্ছন্নভাব তাঁর মঙ্গলবারেও কাটেনি। যৌথ বিবৃতির আসরেও তিনি তার উল্লেখ করেন। মোতেরা স্টেডিয়ামেও তিনি যা বলেছিলেন, মঙ্গলবার হায়দরাবাদ হাউসেও তার উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, মৌলবাদী ইসলামি সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে বাঁচতে দুই দেশই অঙ্গীকারবদ্ধ। এই বিপদের হাত থেকে নাগরিকদের বাঁচাতে তাঁর দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। পাকিস্তানকে বলা হচ্ছে, দেশের মাটিকে যেন সন্ত্রাসবাদী কাজে ব্যবহৃত হতে না দেওয়া হয়।
ট্রাম্প অবশ্য পাকিস্তানের সমালোচনা করেননি। বরং সোমবার মোতেরায় ‘নমস্তে ট্রাম্প’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পাকিস্তানকে ‘ভালো বন্ধু’ বলে জানিয়েছিলেন।
প্রতিরক্ষা চুক্তি ছাড়াও ট্রাম্প জানান, ৫জি স্পেকট্রাম নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিয়েও ভারতের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রযুক্তি যাতে অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়, তা দেখা দরকার।
৫-জি স্পেকট্রাম সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র বেশ সাবধানী। ভারতে এই প্রযুক্তির ট্রায়ালে চীনা সংস্থা হুয়াউই যাতে অংশ নিতে না পারে, সে জন্য ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু ভারত চীনা সংস্থাকে সেই সুযোগ দিয়েছে। ট্রাম্প চান, ভারত এই বিষয়ে সাবধানী হোক। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক এত ভালো অতীতে কখনো ছিল না। দুই দেশই চমৎকারভাবে এগিয়ে চলেছে।
যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, গত আট মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে এটা তাঁর পঞ্চম সাক্ষাৎ। এখন এটা আরও ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে, এই সম্পর্ক স্রেফ দুই দেশের সরকারের মধ্যে নয়, এই সম্পর্ক জনতার দাবি মেনে। এই সম্পর্ক জনমুখী। মোদি বলেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে গণতান্ত্রিক উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে।
ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া আজ দিল্লি সরকার পরিচালিত একটি স্কুল পরিদর্শন করেন। দিল্লির সরকার পরিচালিত স্কুলগুলোয় আম আদমি পার্টির সরকার এক বছর ধরে ‘হ্যাপিনেস ক্লাস’ শুরু করেছেন। তা কী রকম, কীভাবে পড়ুয়াদের শ্রান্তি ও ক্লান্তি দূর করা হয়, লেখাপড়ায় আগ্রহ বাড়ানো হয়, তা তিনি দেখেন। এই সিদ্ধান্ত স্কুল ছুটের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজ ভারতীয় শিল্পপতিদের সঙ্গেও মিলিত হন। শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বিকেলে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এযাবৎ একবারের জন্যও যা করেননি।
রাষ্ট্রপতি ভবনে ট্রাম্পের সম্মানে দেওয়া ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নৈশভোজ কংগ্রেস বয়কট করে। দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে আমন্ত্রণ না জানানোয় নৈশভোজে যাননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী ও রাজ্যসভার নেতা গুলাম নবি আজাদ।