গণমাধ্যমের স্বাধীনতা

ভারতে সাংবাদিক হেনস্তায় উদ্বেগ বাড়ছে

সাংবাদিকদের ধারাবাহিকভাবে হেনস্তা করার ঘটনায় তাঁদের একাধিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের নয়াদিল্লিতে প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ায়
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কেরালা রাজ্যে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান পরিচিত নাম। অল্প বয়সী এই সাংবাদিক বিভিন্ন পোর্টালে নিয়মিত লেখালেখি করেন। গত বছর অক্টোবর মাসে দলিত সম্প্রদায়ের এক কিশোরীর গণধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে দিল্লি থেকে উত্তর প্রদেশের হাথরসে যাচ্ছিলেন তিনি। সেখানে যাওয়ার পথে তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকেই তিনি কারাগারে। সাত মাস পর গত ৪ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগে উত্তর প্রদেশ পুলিশ আদালতে পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দিয়েছে।

ওই কিশোরীকে গণধর্ষণের ঘটনা গোটা দেশে আলোচনায় আসে। উত্তর প্রদেশ পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। সিদ্দিক কাপ্পানের আইনজীবী বলছেন, তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন।

ভারতের সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের ঘটনা অনেকটা নিয়মিত হয়ে উঠেছে। সংবাদমাধ্যমের দপ্তরেও তল্লাশি হচ্ছে। যেমন গত ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে নিউজক্লিক নামে সংবাদবিষয়ক ওয়েবসাইটের দপ্তরে তল্লাশি চালিয়েছিল ভারতের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। নিউজক্লিকের প্রধান সম্পাদকের বাড়ি, অন্যান্য সম্পাদক ও কর্মীদের বাড়ি বা দপ্তরেও তল্লাশি চালায় ইডি। সাংবাদিক হত্যার ঘটনাও আছে। ২০১৮ সালে পাঁচজন হত্যার শিকার হয়েছিলেন। ২০১৭ সালে হত্যা করা হয় টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাবেক সাংবাদিক ও সম্পাদক গৌরী লঙ্কেশকে।

সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে, এমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠন, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নতুন বছরের শুরু থেকে ভারতে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার, মামলা দায়ের বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার মতো ঘটনা বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে এই প্রবণতা লক্ষ করা গেলেও সম্প্রতি তা উদ্বেগের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’। গত বছর ১৮০টি দেশে সমীক্ষা চালিয়ে সংগঠনটি বলেছিল, তাদের তালিকায় ভারতের স্থান ১৪২। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ভারত আরও দুই ধাপ নিচে নেমে যায়। অবশ্য প্রতিবেদনটি মেনে নেয়নি ভারত সরকার। ফ্রান্সে ভারতের রাষ্ট্রদূত রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে ভারতের আপত্তির কথা জানিয়েছেন।

বছরের শুরুটা ভালো হয়নি

ভারতে সম্পাদকদের জাতীয় সংগঠন এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া বলেছে, ভারতে সংবাদমাধ্যমের জন্য ২০২১ সালের শুরুটা ভালোভাবে হয়নি। জানুয়ারি মাসের ১৭ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে অন্তত ১৫ জন সাংবাদিক ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে। তাঁদের কাউকে কাউকে কয়েক দিন জেলে রেখে জামিন দেওয়া হয়েছে। অনেককে দীর্ঘ সময় কারাগারে রাখা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটছে মূলত দিল্লিতে, তবে ভারতের অন্যান্য প্রান্তেও সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনা বাড়ছে। একটি সহিংসতার ঘটনা নিয়ে ফেসবুক পোস্টের জন্য মেঘালয় রাজ্যে শিলং টাইমস পত্রিকার সম্পাদক প্যাট্রিসিয়া মুখিমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এ বছর নামকরা সম্পাদকদের মধ্যে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সিদ্ধার্থ বরদারাজন (সাবেক সম্পাদক, দ্য হিন্দু; বর্তমানে দ্য ওয়ার-এর সম্পাদক), রাজদীপ সরদেসাই (সাবেক সম্পাদক এনডিটিভি, বর্তমানে উপদেষ্টা সম্পাদক ইন্ডিয়া টুডে), বিনোদ জশ (কার্যনির্বাহী সম্পাদক দ্য ক্যারাভান), মৃণাল পান্ডে (সাবেক সম্পাদক হিন্দুস্তান টাইমস, হিন্দি)। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে ও পরে চাকরি গেছে অনেক সম্পাদক ও সাংবাদিকের, যদিও এ নিয়ে তাঁরা জনসমক্ষে মুখ খোলেননি।

গত জানুয়ারি মাসে মণিপুরের তিন সাংবাদিক—পাওজেল চাওবা, সাদকপাম ধীরেন এবং এম জয় লুয়াংকে বিশেষ নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। দ্য ফ্রন্টিয়ার মণিপুর নামে একটি সংবাদবিষয়ক পোর্টালের প্রধান সম্পাদক ধীরেন ও কার্য নির্বাহী সম্পাদক চাওবার বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ ছিল, মণিপুরের সশস্ত্র নিষিদ্ধ সংগঠন নিয়ে একটি প্রতিবেদনে তাঁরা যা লিখেছিলেন, তাতে বিপ্লবী চিন্তাভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। জয় লুয়াংয়ের নামেও একই প্রতিবেদনে তথ্য সরবরাহের অভিযোগ আনা হয়। পরে মণিপুরি সাংবাদিক সংগঠনের সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেওয়া হয়।

সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক স্কট গ্রিফিন এই ঘটনার নিন্দা করে বলেন, ‘সংবাদ বা মতপ্রকাশের জন্য যেভাবে ভারতে অপরাধ দমনবিষয়ক ধারাগুলো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন।’

কৃষকদের প্রতিবাদের সময় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দিল্লির দুই সাংবাদিক মনদীপ পুনিয়া ও ধর্মেন্দ্র সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়। মনদীপ পুনিয়া জানান, গ্রেপ্তারের পর তাঁর ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয় এবং ব্যাপক মারধর করা হয়। তিন দিন জেলে রাখার পর আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নেহা দীক্ষিতের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে বলে এডিটরস গিল্ড জানিয়েছে।

ভারতের সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের ঘটনা অনেকটা নিয়মিত হয়ে উঠেছে। সংবাদমাধ্যমের দপ্তরও তল্লাশি হচ্ছে।

গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক

ভারতে সংবাদমাধ্যমকে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। এশিয়ায় সিপিজের প্রধান গবেষক আলিয়া ইফতেখার প্রথম আলোকে জানান, ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা দ্রুত কমছে। সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীন রাখার সাংবিধানিক দায়বদ্ধতাকে সরকার ও কর্তৃপক্ষ ক্রমশ অগ্রাহ্য করছে। কেউ তাদের সমালোচনা করলেই হেনস্তা করা হচ্ছে। দেশদ্রোহের নামে সাংবাদিকদের জেলে পোরা হচ্ছে, অসংখ্য মামলার জালে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। কৃষক আন্দোলন নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে সাংবাদিক মনদীপ পুনিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের জন্য এটা বিপজ্জনক।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আরেকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচও।

পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের দক্ষিণপন্থী সাংবাদিক ও রিপাবলিক টিভির প্রধান সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীকে ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে রাজ্য সরকার। পরে তিনি জামিন পান। তবে এসবের পাশাপাশি সরকার-ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের নানাভাবে পুরস্কৃত করার বিষয়টিও আলোচনায় আছে।

২০১৭ সালের একটি প্রতিবেদনের কারণে সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতার বিরুদ্ধে মানহানির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন গুজরাটের একটি আদালত। মামলাটি করেছিল ভারতের একটি বহুজাতিক সংস্থা আদানি গ্রুপ। নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আদানি গ্রুপকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। অতীতে গুহঠাকুরতার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছে মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তেল-গ্যাস নিয়ে গুহঠাকুরতা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর একটি বইয়ে।

ইন্টারনেটেও কড়াকড়ি

সম্প্রতি ইন্টারনেটেও সরকারের কড়াকড়ি আরোপের বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। কিছুদিন আগে ক্যারাভান পত্রিকার টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে সমালোচনার মুখে তা চালু হয়েছে। সাংবাদিকদের কেউ কেউ মনে করেন, মূলত সরকারবিরোধী কথাবার্তা বন্ধ রাখতে মাঝেমধ্যে ভারতে ইন্টারনেটও অচল করে রাখা হচ্ছে।

ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ফলে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা গ্লোবাল কস্ট অব ইন্টারনেট শাটডাউন জানিয়েছে, ২১টি দেশের মধ্যে ২০২০ সালে ভারতে ইন্টারনেট সবচেয়ে বেশি সময় বন্ধ ছিল, ৮ হাজার ৯২৭ ঘণ্টা।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন

ভারতের বেশ কয়েকটি জায়গায়, বিশেষত কাশ্মীর, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারত এবং মাওবাদ-অধ্যুষিত মধ্য ভারতে সাংবাদিকেরা আগে থেকেই আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এখন দেশের রাজধানীতে বিখ্যাত পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালানো হচ্ছে। একে ‘সাংঘাতিক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেন আইনজীবী, সাংবাদিক ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করেন এমন মানুষজন।

সংবিধানের ১৯(আই)(এ) ধারায় ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রয়েছে। এ ধারার জোরে শুধু সংবাদ সংগ্রহ বা প্রকাশই করা যায় না, বিজ্ঞাপন দেওয়া যায়, এমনকি কোনো ঘটনা নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করা যায়। অবশ্য সংবাদমাধ্যম কতটা স্বাধীন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ও আইনজীবী ঝুমা সেন বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নামে, দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং বিদেশের সঙ্গে সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর রাশ টানার কাজটি করা হয় ১৯৫১ সালের প্রথম সংশোধনীটির মাধ্যমে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্ন তুলে একটি ধারার [১৯(২)] মাধ্যমে এ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। তিনি বলেন, এ নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করা হয় ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪(এ) ধারা মারফত, যেটি আসলে দেশদ্রোহ দমনের ধারা।

ঝুমা সেন বলেন, এটি একটি কুখ্যাত ব্রিটিশ ধারা। এ সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের ওপর ধারাটির প্রয়োগ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে জেল হতে পারে। তবে এটি প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্য দীর্ঘ সময় ধরে কাউকে হেনস্তা করা, তাঁর জীবন দুর্বিষহ করে তোলা।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মাসের পর মাস ইন্টারনেট বন্ধ রাখার আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে গিয়েছিলেন কাশ্মীর টাইমস-এর সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন। এই সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে কাশ্মীর পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

অনুরাধা ভাসিন প্রথম আলোকে বলেন, কাশ্মীরে এখনো তাঁর অফিসটি খুলতে দেওয়া হয়নি। গত অক্টোবর মাসে কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র কাশ্মীর টাইমস সিল করে দেয় সেখানকার একটি সরকারি দপ্তর।

অনেকে মনে করেন, যেহেতু কাশ্মীরে অধিকাংশ বড় সংবাদপত্রের দপ্তর সরকারের বন্দোবস্ত দেওয়া জমিতে রয়েছে, তাই সম্পত্তি সরকারের। ফলে কোনো কারণ না দেখিয়ে কাশ্মীর টাইমস-এর দপ্তর সিল করে দেয় প্রশাসন। সম্ভবত কাশ্মীর টাইমস-এর প্রতিবেদন সরকারের পছন্দ না হওয়ার কারণেই তারা এই কাজ করেছে।

অনুরাধা ভাসিন সে সময় এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে, সে আশঙ্কায় তাঁরা আদালতে গিয়েছিলেন। আদালত অফিস সিল করার ব্যাপারে স্থগিতাদেশ জারি করেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত অফিসটি খুলতে দেওয়া হয়নি।

জরুরি অবস্থার চেয়েও ভয়াবহ

তবে শুধু ভারতের উত্তরে কাশ্মীর বা দিল্লিতে নয়, ভারতের পূর্ব প্রান্তে পশ্চিমবঙ্গেও এ ধরনের সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনা ঘটছে। গত বছর আগস্ট মাসে আরামবাগ টিভি নামে পশ্চিমবঙ্গের একটি স্থানীয় চ্যানেলের মালিক শফিকুল ইসলাম এবং এর প্রতিবেদক সুরজ আলী খানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান নিয়ে এক প্রতিবেদনে তাঁরা বলেছিলেন কীভাবে ত্রাণের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে। আদালত পরে তাঁদের জামিনে মুক্তি দেন।

মুম্বাই থেকে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী তিস্তা সেতলবাদ প্রথম আলোকে বলেন, একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে ১৫৪টি মামলার মধ্যে ৭৩টি করা হয়েছে বিজেপি-শাসিত রাজ্যে। আরও ৩০টি মামলা করা হয়েছে বিজেপি বা তার শরিক দল ক্ষমতায় রয়েছে, এমন রাজ্যে। বাকি মামলাগুলো করা হয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। প্রায় ৪০ শতাংশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০২০ সালে। এসব ঘটনার নিন্দা করে কলকাতাতেও সাংবাদিকদের একাংশ বিবৃতি দিয়েছে।

দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাবেক সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, জরুরি অবস্থার সময় হয়তো অনেক বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কিন্তু এখন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে অনেক পরিকল্পিতভাবে। দ্বিতীয়ত, জরুরি অবস্থা ছিল খুব কম সময়ের জন্য, ১৯৭৫-এর জুন থেকে ১৯৭৭-এর মার্চ পর্যন্ত ২১ মাস। আর এই রাজত্ব চলছে সাত বছর ধরে। ২০১৯ সালের পর প্রচারমাধ্যমের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ অনেক বেড়েছে। যেসব বাণিজ্যিক সংস্থা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়, তাদের দিয়ে প্রচারমাধ্যমের ওপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

অবশ্য সরকার এখন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি। তাই বেছে বেছে নিউজক্লিক বা মনদীপ পুনিয়ার মতো কমবয়সী সাংবাদিকদের হেনস্তা করা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্বজিৎ রায়। তিনি বলেন, ‘এসব অল্প বয়স্ক সাংবাদিক একটা মুঠোফোন নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অবিশ্বাস্য সব রিপোর্ট করছে। এরা সরকারি প্রেস কার্ড থাকা না থাকার পরোয়া করছে না। এরা বড় সাংবাদিক নয়, এদের গ্রেপ্তারে বিশেষ আলোড়ন হবে না, সেটা বুঝেই এদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এটি জরুরি অবস্থার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ।’