মুষলধারে বৃষ্টির জেরে ভারতের উত্তরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। এর মধ্যে আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে বড় বড় নদ–নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে জনপদ। এ দুই রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে। বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলেও ভারী বৃষ্টি ও বন্যার সতর্কতা জারি করেছে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি)। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও এনডিটিভির
আসাম ও মেঘালয়ের ২৫ জেলার অন্তত ১১ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ ও গৌরাঙ্গ নদীর পানি অনেক জায়গায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে বন্যাকবলিত জেলাগুলোর প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। আসাম রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সেখানকার ১ হাজার ৫১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতা জারি করে লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিতে অনুরোধ জানিয়েছে।
আসামের রাজধানী গুয়াহাটির অনেক জায়গায় বৃষ্টি ও বন্যার কারণে তিন দিন ধরে জনজীবন স্থবির হয়ে রয়েছে। অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে ভূমিধস। গত বুধবার বাকসা জেলায় একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। রাজ্যে অন্তত ছয়টি ট্রেনের চলাচল বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিতে মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশেও জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে ও হচ্ছে।
ভূমিধস, বজ্রপাত ও আকস্মিক বন্যায় মেঘালয়ে ১৩ জন ও আসামে ৩ জন মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার ভূমিধসে আসামের গোলপাড়া জেলায় দুই শিশু মারা গেছে। এ ছাড়া পানিতে ডুবে মারা গেছেন দুজন। এ নিয়ে আসামে চলতি বছর বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৬। আসাম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির (এএসডিএমএ) জারি করা বুলেটিনে বলা হয়েছে, বন্যার কারণে ১৩টি বাঁধ ভেঙেছে। ৬৪টি রাস্তা ও একটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আইএমডি জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত আসাম ও মেঘালয়ে ২৭২ মিলিমিটার অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা ১২২ বছরের মধ্যে জুন মাসে সর্বোচ্চ। গত তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এটিও ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির রেকর্ড।
পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আসাম ও মেঘালয়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে আইএমডি। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে মেঘালয় রাজ্য সরকার সেখানকার চারটি অঞ্চল দেখভাল করার জন্য চারটি কমিটি করে দিয়েছে। ত্রিপুরা, আসাম ও মিজোরামে যাতায়াতের জাতীয় মহাসড়কের অনেক জায়গায় গর্ত তৈরি হয়েছে। দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
আইএমডির তথ্য অনুযায়ী, আসাম ও মেঘালয়ের পাশাপাশি ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া গুজরাট, উত্তরাখন্ড, ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশে, ছত্তিশগড়, ওডিশা ও গোয়ায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানী দিল্লিতেও গতকাল শুক্রবার বিকেলে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টিতে ভূমিধস হয়ে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়েছে।
আইএমডি বলেছে, ভারতের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত ২২ জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
জাতির এই দুর্ভোগে সরকারের পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকেরাও বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসছেন। সরকারের ত্রাণ তহবিলে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।