>• কাল চতুর্থ দফার ভোট
• বিজেপি লড়ছে মোদির নামে
• এই পর্ব ঠিক করবে মোদির প্রধানমন্ত্রিত্ব
প্রথম তিন দফায় যা হওয়ার তা হয়েই গেছে, ভারতের শাসক দল বিজেপির আসল লড়াই শুরু কাল সোমবার থেকে। ওই দিন চতুর্থ দফার ভোট। এই শেষ চার পর্বের ভোটের ফলই ঠিক করে দেবে, আরও পাঁচ বছরের জন্য নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না।
কাল থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ পর্ব শাসক দলের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে গোবলয় বলতে যা বোঝানো হয়, সেই রাজ্যগুলোয় এই পর্বগুলোতে সেই সব কেন্দ্রে ভোট হবে, যেখানে বিজেপি ও তার শরিকেরা গত ভোটে অন্যদের আঁচড় পর্যন্ত কাটতে দেয়নি। সেই রাজ্যগুলোর মোট ১৯৫টি আসনের মধ্যে ২০১৪ সালে বিজেপি ও তার শরিকেরা দখল করেছিল ১৭৬টি। পাঁচ বছর আগে নরেন্দ্র মোদি গোটা দেশের কাছে শাসক হিসেবে অচেনা ছিলেন। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা সেজে আর্যবর্তের মন জিতেছিলেন। সেই অচেনা মোদি আজ শুধু চেনাই নন, পাঁচ বছর পর এখন তাঁর মূল্যায়নের সময়। উত্তর প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খন্ডে বিরোধীরাও এবার অনেক বেশি সংগঠিত। মোদির চ্যালেঞ্জ তাই ভিন্ন প্রকৃতির। সেই কারণেই চতুর্থ পর্ব থেকে ভোট তাঁর কাছে হয়ে উঠছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্থ থেকে শেষ দফার ভোট গোবলয়ের কোন রাজ্যের কতগুলো আসনে, তা দেখলেই বোঝা যাবে মোদির কাছে কেন এটা মরণ-বাঁচনের লড়াই। এই পর্ব থেকে ভোট হবে দিল্লির ৭, রাজস্থানের ২৫ ও মহারাষ্ট্রের ৪৮ আসনের মধ্যে বাকি ১৭ আসনে। এই ৪৯ আসনের প্রতিটিই রয়েছে বিজেপির কবজায়। এগুলোর বাইরে ভোট হবে বিহারের বাকি ২৬ আসনে, যেগুলোর মধ্যে বিজেপি ও তার শরিক পেয়েছিল ২৫টি এবং ঝাড়খন্ডের ১৪ আসন পেয়েছিল। এই দুই রাজ্যের এই আসনগুলোর মধ্যে বিজেপি হেরেছিল মাত্র ২টিতে। ভোট হবে মধ্যপ্রদেশেও, যেখানকার ২৯টির মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ২৭ এবং পাঞ্জাবের ১৩ আসনে, যেখানে শাসক গোষ্ঠীর দখলে ছিল ৬টি। ভোট বাকি হরিয়ানার ১০ আসনেও, যেখানে বিজেপি ও শরিকের কাছে রয়েছে ৭টি এবং উত্তর প্রদেশের বাকি ৫৪ আসনে। এই আসনগুলো রাজ্যের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে। ৪টি মাত্র বাদ দিয়ে ৫০টিই পেয়েছিল বিজেপি।
বিজেপির কাছে এই পর্ব থেকে চ্যালেঞ্জ আরও জবরদস্ত। কারণ, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খন্ডে বিরোধী জোট এবার গতবারের চেয়ে বেশি তাগড়া। এই তিন রাজ্যে ৯৪ আসনের ভোট বাকি। এর মধ্যে ৮৭টি জিতেছিল বিজেপি। জোটবদ্ধতার পাটি গণিত পঞ্চাশ ভাগ আসন কেড়ে নেওয়ার অর্থ ৪৭টি কমে যাওয়া। এর বাইরে অন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান। দুই রাজ্যের মোট আসন ৫৪। দুটি ছাড়া সব কটিই বিজেপির। দুই রাজ্যে ক্ষমতায় আছে কংগ্রেস। বিজেপিও জানে, পাঁচ বছর আগের কংগ্রেসের সঙ্গে পাঁচ বছর পরের কংগ্রেসের ফারাক বিস্তর। পাঁচ বছর আগের কংগ্রেস ছিল ডিফেন্ডার, এবার চ্যালেঞ্জার।
গোবলয়ের ঘাটতি মেটাতে দুই রাজ্য ও একটি অঞ্চলের দিকে মোদি চেয়ে রয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা ও গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত। পশ্চিমবঙ্গের মোট আসন ৪২, ওডিশার ২১ এবং আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ২৫। মোট ৮৮টি আসন। এগুলোর মধ্যে পাঁচ বছর আগে বিজেপি পেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে ২, ওডিশায় ১ এবং আসামে ৭। মোট ১০টি। গোবলয়ের ঘাটতি মেটাতে কত আসন বাড়তি জোগাড় করবেন মোদি এখান থেকে? প্রশ্ন সেটাই। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিজেপি কিছুটা ব্যাকফুটে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উপস্থিতি নিঃসন্দেহে জোরালো। নিশ্চিতভাবেই তারা ভোট পাবে বেশি। কিন্তু ভোটের দিন বুথে বুথে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে মোকাবিলা করার মতো সাংগঠনিক শক্তি কি বিজেপি আয়ত্ত করেছে? এটাও বড় প্রশ্ন।
বিজেপি ভোট লড়ছে পুরোপুরি নরেন্দ্র মোদির নামে। দল ও জোটকে তিনি পার করিয়ে দিতে পারবেন কি না, কাল সোমবার থেকেই শুরু সেই পরীক্ষা।