ভারতের লোকসভা নির্বাচন দ্বারপ্রান্তে। নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়েছে। নেমে পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী থেকে সমর্থকেরা নির্বাচনী ময়দানে। সব দলই চাইছে তাদের নেতা–নেত্রীরা এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হোক।
বিজেপি বা বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ আগেভাগেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছে। বলেছে, তাদের প্রার্থী এবারও মোদি। কিন্তু বিরোধী দল বা জোটের কে হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ, তা এখনো ঠিক করে উঠতে পারেনি বিরোধী দল বা প্রস্তাবিত বিরোধী জোট।
এখন পর্যন্ত তিনটি জোট নেমেছে ভারতের রাজনীতিতে। বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ আর তৃতীয়টি কংগ্রেস–বিজেপি বাদ দিয়ে প্রস্তাবিত ফেডারেল ফ্রন্ট। এই ফ্রন্ট গঠনের প্রথম ডাক দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর তাতে শামিল হন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ আরও কয়েকটি দল। এই দলই ১৯ জানুয়ারি মমতার ডাকে বিজেপিকে হটানোর লক্ষ্য নিয়ে এক মহাসমাবেশে যোগ দিচ্ছে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে। এখানেই ঘোষণা হওয়ার কথা মোদিবিরোধী ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের।
প্রসঙ্গত, এনডিএ বা বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মোদি যে তা নিশ্চিত। ইউপিএর প্রার্থী কে হবেন, তা এখনো ঘোষিত হয়নি। রাহুল গান্ধীর নাম উঠে আসছে। আর তৃতীয় ফেডারেল ফ্রন্টের প্রার্থী কে হবেন, তাই নিয়ে এই মোদিবিরোধী জোটের জট এখনো কাটেনি।
মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস দাবি তুলেছে, এবার মোদিবিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী করা হোক মমতাকে। এই দাবিতে তারা ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে স্লোগানও তুলবে। মমতার বিশ্বাস, এবার পশ্চিমবঙ্গের লোকসভার ৪২টি আসনেই জিততে চলেছে তাঁর দল তৃণমূল। তাই বিজেপি, কংগ্রেসের পর আসনসংখ্যায় তার দল হবে তৃতীয়। কারণ, উত্তর প্রদেশে মায়াবতী এবং অখিলেশ যাদব জোট করে নির্বাচন করায় তাঁরা ভাগে পেয়েছেন ৩৮টি করে আসন। সেই তুলনায় মমতার আশা, ৪২ আসনেই জিতবে তৃণমূল। ফলে, একক দল হিসেবে ফেডারেল ফ্রন্টে তার দলই হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই প্রধানমন্ত্রীর দাবিদারের পথ তাঁর দলের পক্ষেই প্রশস্ত হবে।
উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর ৬৩তম জন্মদিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। এদিন তিনি বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে উত্তর প্রদেশ। কারণ, উত্তর প্রদেশ এখনো লোকসভায় আসনের দিক থেকে শীর্ষে। তাই তিনি তাঁর দলীয় সমর্থকদের বলেছেন, সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। হটাতে হবে বিজেপিকে। এদিন বহুজন সমাজ পার্টি নেতা সুধীন্দ্র ভাদোরিয়া দাবি তুলেছেন মায়াবতীকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী করার। বলেছেন, ফেডারেল ফ্রন্টের তিনিই হবেন যোগ্য প্রার্থী।
এ ছাড়া এই ফেডারেল ফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁরা হলেন তেলেগু দেশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু।
জনমত সমীক্ষায় বিজেপির আসন কমছে উত্তর প্রদেশে
ভারতে জনসংখ্যার দিক থেকে সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তর প্রদেশ। এই রাজ্যে রয়েছে লোকসভার ৮০টি আসন। একসময় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ণায়ক শক্তি ছিল এই উত্তর প্রদেশ এবং পাশের বিহার। কংগ্রেসের ঘাঁটিও ছিল এই উত্তর প্রদেশ এবং বিহার। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উত্তর প্রদেশ ও বিহারে জনপ্রিয়তা কমে কংগ্রেসের। উত্তর প্রদেশে ক্ষমতায় আসে মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। আর বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং নিতীশ কুমারের জনতা দল (সংযুক্ত)।
গত নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে প্রথম ক্ষমতায় আসে বিজেপি। সেই উত্তর প্রদেশের এবার লোকসভার নির্বাচন নিয়ে জনমত সমীক্ষা করে ইন্ডিয়া টিভি এবং সিএনএক্স। আজ বুধবার সেই সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমে। সেই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ৭৩টি আসন থেকে এবার বিজেপির আসন ৪৪টি কমে দাঁড়াতে পারে ২৯টি আসন। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৭১টি আসন। আর ২টি আসন পেয়েছিল বিজেপির জোটসঙ্গী ‘আপনা দল’। সব মিলিয়ে ছিল ৭৩টি আসন।
অন্য একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিজেপির বর্তমান সাংসদদের মধ্যে ৬০ শতাংশ সাংসদের ওপর ক্ষুব্ধ রয়েছেন দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা।