গত মাসে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে যখন বোমাবর্ষণ চলছে, তখন ভাড়া বাসায় বন্দী আন্না হোরোদেৎস্কা। ওই সময়ই আন্না ভারতে চলে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন কয়েকটি টি-শার্ট আর একটি কফি মেশিন। বিয়ের উপহার হিসেবে আন্নার দাদি তাঁকে এসব দেন। আইটি কোম্পানিতে কর্মরত ৩০ বছর বয়সী আন্না ১৭ মার্চ দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান ৩৩ বছর বয়সী আইনজীবী অনুভব ভাসিন। এক বছরের বেশি সময় তাঁদের প্রণয় চলছিল। খবর বিবিসির।
বিমানবন্দরে এসে অভিভূত হন আন্না। তিনি দেখেন, একদল বাদক ড্রাম বাজাচ্ছে। উৎসবের সুর ভেসে আসছে তাদের ড্রাম থেকে। অনুভব তখন এক হাঁটু গেড়ে আন্নার সামনে বসে পড়েন। তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। সঙ্গে করে আনা একটি আংটি পরিয়ে দেন আন্নার আঙুলে। প্রস্তাব পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আন্না রাজি হয়ে যান।
গত রোববার দিল্লিতে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গের আন্না-অনুভব জুটির বিয়ে হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে তাঁরা বিয়ে নিবন্ধনের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হবেন। বিয়ে করলেও ভারতীয় আইনে বৈধতা নিতে আদালতে যাবেন তাঁরা। তাঁরা দুজন দুই ধর্মাবলম্বীর—অনুভব হিন্দু আর আন্না খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর। ‘অনুভবকে বিয়ে করা’র উদ্দেশ্যেই এক বছরের ভিসায় ভারতে এসেছেন আন্না।
২০১৯ সালের আগস্টে আন্না ও অনুভবের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। ওই বছর ভারতে ঘুরতে এসেছিলেন আন্না। একা এসেছিলেন তিনি। ভারতে আসার পর একদিন এক বারে (পানশালা) যান আন্না। সেখানেই অনুভবের সঙ্গে দেখা হয় আন্নার। দুজনের দুজনকে ভালো লেগে যায়। একে অপরকে মুঠোফোন নম্বরও দেন। ইনস্টাগ্রামেও একজন আরেকজনকে অনুসরণ করতে শুরু করেন। এরপর কীভাবে কী হলো জানতে চাইলে বিবিসির গীতা পাণ্ডেকে এই নবদম্পতি বলেন, ‘বাকিটা ইতিহাস।’
তবে করোনাভাইরাস মহামারি, কোয়ারেন্টিন-সংক্রান্ত নিয়ম, ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দুই মহাদেশের দুই প্রান্তে থাকা দুজন মানুষের মধ্যে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এতে অনেকবার দেখা করার পরিকল্পনা করলেও তা ভেস্তে যায়। আন্নার জন্মভূমি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
অনুভব যেমন বলছিলেন, ‘২০১৯ সালে আমাদের অনেক কথা হতো।’ এরপর ২০২০ সালের মার্চে আন্না আবারও ভারতে আসেন। এবার সঙ্গে করে এক বান্ধবীকে নিয়ে ভারতে আসার পর অনুভব তাঁদের দুজনকে আগ্রায় ‘প্রেমের তাজমহল’ দেখাতে নিয়ে যান। ভারতের মরুরাজ্য হিসেবে পরিচিত রাজস্থানের আন্নাদের নিয়ে যান অনুভব। তবে করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ভারতে আকস্মিক লকডাউন দেওয়া হয়। অনুভব আন্না ও তাঁর বান্ধবীকে দিল্লিতে তাঁদের বাড়িতে থাকার প্রস্তাব দেন।
অনুভব বলেন, ‘ওই সময় আমরা একে অপরের খুব কাছাকাছি আসি। আমরা বুঝতে পারি, আমরা একে অপরকে পছন্দ করি। তবে আমাদের এই ভালো লাগা ক্ষণিকের জন্য যে ছিল না, সেটা আমরা বুঝতে পারি।
আন্না কিয়েভে চলে যাওয়ার পরই আমরা ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলতে শুরু করি। এরপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে আবার আমাদের দেখা হয়। ওটাই ছিল আমাদের সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তখন আমরা বুঝতে পারি, আমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে।’
এর পর থেকে বাকি সব ঘটনা দ্রুতই ঘটতে থাকে। ওই বছরের আগস্টে অনুভব আন্নার সঙ্গে দেখা করতে কিয়েভে যান। এরপর ডিসেম্বরে আন্না আসেন ভারতে।
সেসব দিনের কথা স্মরণ করে আন্না বলেন, ‘আমি ভারত সফরের শেষ দিন অনুভবের মা মার্চে আমাদের বিয়ের পরামর্শ দেন। আমরাও তখন বিয়ের ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন আমি এই ভেবে আশ্চর্য হই যে সব কেমন জানি দ্রুত ঘটছে। কিন্তু আমার মনে হয়, আরে আমার তো এখন এটাই করা উচিত।’