কংগ্রেসের অস্তিত্বের সঙ্কট, গান্ধী পরিবারের কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা অথবা শচিন পাইলটের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ছাপিয়ে ভারতের মরু–রাজ্য রাজস্থানের নজর এখন নিবদ্ধ কেন্দ্র–রাজ্যের এক অন্য লড়াইয়ের উপর। সেই লড়াই নতুন আঙ্গিকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে ভারতীয় গণতন্ত্রে দলীয় আনুগত্য কেনাবেচার প্রাচীন ব্যাধিকে।
শচিন পাইলটের বিদ্রোহ ও কংগ্রেস সরকারের সঙ্কটকে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট সরাসরি কংগ্রেস বনাম বিজেপির লড়াইয়ে পরিণত করেছেন। বিধায়ক কেনাবেচার 'চক্রান্তের' মধ্য দিয়ে কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটানোর মারাত্মক অভিযোগ তদন্ত করে দেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী গেহলট বিশেষ তদন্তকারী দল বা 'সিট' গঠন করেছেন। আট সদস্যের ওই তদন্তকারী দল খতিয়ে দেখবে কংগ্রেস সরকার ফেলার চক্রান্তে কারা যুক্ত। রাজ্য পুলিশের অপরাধ দমন শাখার এসপি বিকাশ শর্মা ওই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তদন্তকারী দলে রাখা হয়েছে দুর্নীতি দমন শাখা, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ও সন্ত্রাস দমন শাখার কর্তাদের। সিট গঠনের আগে পুলিশের কাছে যে লিখিত অভিযোগে 'দেশ বিরোধিতার' অভিযোগও আনা হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী গেহলটের অভিযোগ, শচিনকে হাতিয়ার করে বিজেপি তাঁর নির্বাচিত সরকার ফেলার চক্রান্ত করেছে। বিপুল অর্থের টোপ দিয়ে (২০ থেকে ২৫ কোটি রুপি) তারা বিধায়ক ভাঙাতে চেয়েছে। ওই চক্রান্তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতা গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত সরাসরি জড়িত বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। অভিযোগের সমর্থনে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব টেলিফোন আলাপচারিতার বেশ কয়েকটি অডিও টেপের উল্লেখ করেছে। সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই টেপগুলো ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ওই টেপের সূত্র ধরে বিজেপির কাছে এক শিল্পপতিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
শুরু থেকে অডিও টেপের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র দাবি করেন, বিধায়কদের ফোনে আড়ি পেতে অসাংবিধানিক উপায়ে কথাবার্তা রেকর্ড করা হয়েছে। ফোনে আড়ি পাততে গেলে যেসব নিয়মকানুন মানতে হয় তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি বিজেপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক জানানো হয়েছে। রাজ্যের কাছে এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রিপোর্টও তলব করেছে।
সিবিআই তদন্তের দাবির সমালোচনায় কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি টুইট করে বলেছেন, রাজ্যের তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই সিবিআইকে দিয়ে বিজেপি সত্য ধামাচাপা দিতে চাইছে।
এই অবস্থায় সরকার বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী গেহলট আরও এক কদম এগিয়ে গেলেন। ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টির দুই বিধায়ক কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। মুখ্যমন্ত্রীও দেখা করেছেন রাজ্যপাল কলরাজ মিশ্রর সঙ্গে। বিদ্রোহী বিধায়কদের পদ থাকবে কি না মঙ্গলবার রাজস্থান হাইকোর্টে সে বিষয়ে শুনানি। শচিন পাইলটের সঙ্গে প্রয়োজনীয় বিধায়ক না থাকায় বিজেপিও এই মুহূর্তে আস্থা ভোটের দাবি জানাচ্ছে না। শচিন ও তাঁর অনুগামীদের এবং চক্রান্ত নিয়ে তদন্তের ভাগ্য কোন দিকে যায় যাবতীয় আগ্রহ এখন তা নিয়েই।