ভারতের বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ শনিবার। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় মামলার রায় দেবেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে গড়া পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ। এ রায় ঘোষণাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। কাল রোববার থেকে শহরে জারি হচ্ছে কারফিউ।
ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গতকাল শুক্রবার ভারতের বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি নিয়ে করা ঐতিহাসিক অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণার কথা জানান।
দেশটির প্রধান বিচারপতি গগৈ ১৭ নভেম্বর অবসর নিচ্ছেন। এর আগেই এই মামলার রায় দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছিল। তখন বলা হচ্ছিল, আগামী দুই থেকে চার দিনের মধ্যে এই বহুল আলোচিত মামলার রায় দেওয়া হতে পারে। একটানা ৪০ দিন শুনানি শেষে গত ১৬ অক্টোবর তিনি জানিয়েছিলেন, অবসর গ্রহণের আগেই তিনি এই বিবাদের মীমাংসা করে ফেলতে চান।
রায় ঘোষণার আগে শান্ত থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিষয়টি নিয়ে গতকাল তিনি একাধিক টুইট করেন। এসব টুইটে তিনি বলেন, ‘এ রায় কারও জন্য জয়-পরাজয়ের বিষয় নয়। রায় যেন শান্তি ও সংহতির বিষয়ে ভারতের মহান ঐতিহ্যকে আরও জোরদার করতে পারে এবং আমাদের সেই চাওয়াই যেন সবার কাছে অগ্রাধিকার পায়। দেশবাসীর প্রতি এই আমার আহ্বান।’
কট্টর হিন্দুদের বিশ্বাস, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় ভগবান রামচন্দ্র জন্মেছিলেন। তাঁর জন্মস্থান বলে চিহ্নিত জায়গায় ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট বাবরের আমলে একটি মসজিদ তৈরি হয়। নাম দেওয়া হয় বাবরি মসজিদ। মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি নিয়ে সেই থেকে হিন্দু-মুসলমানের যে বিবাদ চলছিল, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর তা অন্যদিকে বাঁক নেয়। ওই দিন কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেন। এ নিয়ে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত দুই হাজার লোক নিহত হন। সেই থেকে বাবরি মসজিদের ২ দশমিক ৭৭ একর জমির মালিকানা কার, তার চূড়ান্ত মীমাংসা এখনো হয়নি। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই জমি বিবদমান তিন পক্ষ রাম লালা, সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ড ও নির্মোহী আখড়ার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করার নির্দেশ দেন। তবে সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ হয় সুপ্রিম কোর্টে।
রায় ঘোষণার আগে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাবরি মসজিদ যেখানে অবস্থিত, সেই উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় মোতায়েন করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশের পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য। এ ছাড়া রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচ শর বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
রায় ঘোষণার আগ দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের সব রাজ্যে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে। উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা শহর এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যা শহরে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। ১০ নভেম্বর থেকে এই শহরে জারি হচ্ছে কারফিউ। এই সান্ধ্য আইন অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণার পর চার দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। অযোধ্যার নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে ৪০ কোম্পানি আধা সেনা। উত্তর প্রদেশের ধর্মীয় জায়গাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।