সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার আর নেই

কুলদীপ নায়ার
কুলদীপ নায়ার

বিশিষ্ট ভারতীয় সাংবাদিক, কলাম লেখক ও লেখক কুলদীপ নায়ার মারা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে দিল্লির একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।

ভারতের স্থানীয় সময় বেলা একটায় নয়াদিল্লির লোধি রোডের শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে দ্য হিন্দুর খবরে জানানো হয়।

কুলদীপ নায়ারের জন্ম ১৯২৩ সালে, অবিভক্ত পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে। তাঁর বাবা নামকরা চিকিৎসক ছিলেন। সেই সুবাদে স্থানীয় হিন্দু-মুসলিম ও শিখদের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। কুলদীপ নায়ার আইনে স্নাতক হয়েও সাংবাদিকতায় কর্মজীবন শুরু করেন। সাক্ষী হয়েছেন বিভিন্ন ঐতিহাসিক মুহূর্ত ও ঘটনার। পরবর্তী সময়ে নিজেকে বহুমাত্রিক পরিচয়ে বিস্তৃত করেন।

সাংবাদিকতার বিরতিতে কুলদীপ নায়ার সরকারি চাকরি করেছেন, বিদেশে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন, হয়েছেন দেশটির উচ্চ পরিষদ, তথা রাজ্যসভারও সদস্য।

কুলদীপ নিজেকে অবশ্যই ভারতীয় মনে করতেন, কিন্তু তার চেয়েও বেশি মনে করতেন উপমহাদেশীয়। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী চেয়েছিলেন, আবার পাকিস্তানের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি উগ্র ধর্মবাদিতার মতো অপছন্দ করতেন উগ্র জাতীয়তাবাদকে।

কুলদীপ নায়ারের আত্মজীবনী বিয়ন্ড দ্য লাইনস-বইয়ের প্রচ্ছদ

কুলদীপ নায়ার ভারতীয় পত্রিকা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাবেক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর আত্মজীবনী ‘বিয়ন্ড দ্য লাইনস’ বা সীমার ওপারেসহ তাঁর লেখা ১৫টি বই রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ইন্ডিয়া আফটার নেহরু’, ‘ইমার্জেন্সি রিটোল্ড’, ‘ডিসট্যান্ট নেবারস: এ টেল অব দ্য সাবকন্টিনেন্ট’ প্রভৃতি। তাঁর কলাম ‘বিটুইন দ্য লাইন’ দেশ-বিদেশের ১৭টি ভাষার ৮০টি পত্রিকায় ছাপা হয়।

‘বিয়ন্ড দ্য লাইনস’-এর শুরু শিয়ালকোটে, তাঁর কৈশোরে যখন দেশ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট্র হয়, সমাপ্তি টেনেছেন মনমোহন সিংয়ের শাসনামলে এসে। এই যে প্রায় ৭০ বছরের কালপর্ব, এই সময়ে উপমহাদেশে রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মানবিক বিপর্যয়, যুদ্ধ-বৈরিতা, দ্বিপক্ষীয় ও ত্রিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন—সবই বিবৃত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনীতে।

২০১৫ সালে অষ্টমবারের মতো রামনাথ গোয়েকা এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তাঁকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে।

বিশিষ্ট এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।