জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠানই হয় মেয়ের জামাইকে তুষ্ট করে খাওয়ানোর জন্য। তাই জামাইয়ের পাতে আম, কাঁঠাল আর লিচুর পাশাপাশি ইলিশ মাছ থাকা চাইই চাই।
আগামী মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গজুড়ে আয়োজিত হতে যাচ্ছে জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠান। এই উৎসবকে ঘিরে জামাইবাবুরা ছুটে আসছেন শ্বশুরবাড়িতে। শ্বশুররাও ছুটছেন ফলমূল আর মাছ কিনতে। প্রতিবছর এই সময়টা পশ্চিমবঙ্গে মাছ-ফলের বাজারে দাম থাকে চড়া।
এবারে ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠেছে ১৫ জুন। প্রজননের জন্য ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠানকে মাথায় রেখে ওই দিনই ইলিশ ধরার জন্য পশ্চিমবঙ্গের জেলেরা নৌকা নিয়ে পাড়ি জমান গভীর সমুদ্রে। গত শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথর প্রতিমা, গঙ্গাসাগর, কুলতলি, ডায়মন্ড হারবার আর রায়দীঘি থেকে হাজার খানেক ইলিশ ধরার ট্রলার সমুদ্রে যাত্রা করে। একেকটি ট্রলারে ছিলেন গড়ে ২০ জন জেলে। গভীর সমুদ্রে অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার, পানীয়, মাছ সংরক্ষণের জন্য বরফ এবং ট্রলারের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিয়ে যাত্রা করেন তাঁরা।
কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজ্য সরকারের মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিটি মাছ ধরার ট্রলারকে এক সতর্কবার্তায় জানিয়ে দেওয়া হয়। ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়, সমুদ্রের প্রতিকূল আবহাওয়া মাছ ধরার জন্য অনুকূল নয়। সমুদ্র এখন উত্তাল। জাল পাতাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সব মাছ ধরার ট্রলারকে তীরে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। শুক্রবার ও গতকাল শনিবার সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া হাজার খানেক ট্রলার খালি হাতেই ফিরে আসে।
এই ঘটনার পর হতাশ হয়ে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। যে আশা নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন, সেই আশার ফসল তুলতে পারেননি। জেলেরা জানালেন, একেকটি ট্রলারে সমুদ্রে পাড়ি দিতে জোগাড় রাখতে হয় ২০ জন জেলেদের খাওয়াদাওয়া, বরফ এবং জ্বালানি তেল। এই বাবদ খরচ পড়ে এক থেকে দেড় লাখ রুপি। কিন্তু মাছ না ধরে ফিরে আসায় তাঁদের বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
এ কারণে এবারের জামাইষষ্ঠীতে আর তাজা ইলিশ জুটবে না জামাইদের পাতে। তবে জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠানের জন্য গত বছরই ইলিশ সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন ইলিশ ব্যবসায়ীরা। মৎস্য সংরক্ষণের কোল্ড স্টোরেজে এসব মাছ রাখা থাকে। এবার সেই ইলিশই জুটছে জামাইয়ের কপালে।
প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরবেষ্টিত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার উপকূল এলাকায় এখন অন্তত আড়াই হাজার ট্রলার রয়েছে সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য। আর এই এলাকার লক্ষাধিক মানুষের প্রধান জীবিকা সমুদ্র থেকে মাছ ধরা।