ভারতের উত্তর দিল্লির নেহরু বিহারের মন্দির নব দুর্গা। সেখানেই দেখা গেল বোরকায় ঢাকা ৩২ বছরের ইমরানা সাইফিকে। হাতে জীবাণুরোধী স্প্রে। আশপাশের বেশ কয়েকটি মসজিদ, মন্দির, গুরুদুয়ারাকে জীবাণুমুক্ত রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন ইমরানা সাইফি।
ইমরানার তিন সন্তান। পবিত্র রমজান মাসে সারা দিন রোজা রাখেন তিনি। স্থানীয় আবাসিক সমাজকল্যাণ সংস্থার বরাদ্দ করা স্যানিটাইজার হাতে প্রতিদিনই দায়িত্ব পালন করেন। পুরোহিতরা ইমরানাকে স্বাগত জানান। মন্দিরের ভেতরে জীবাণুনাশক স্প্রে করার অনুমতি চাইলে ইমারানাকে সাহায্য করেন।
ইমরানা সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) নিয়ে সহিংসতার সময় বিপর্যস্ত মানুষকে সহায়তা করেন তিনি। এলাকার আরও তিন নারীকে নিয়ে ইমরানা করোনা সচেতনতায় দল গড়ে তুলেছেন। তাঁরা সবাই করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কাজ করছেন।
উত্তর দিল্লির জাফরাবাদ, মুস্তফাবাদ, চান্দবাগ, নেহেরু বিহার, শিব বিহার, বাবু নগরের অলিগলিতে ঘুরে করোনাভাইরাস সচেতনতায় কাজ করেন ইমরানা ও তাঁর দল। তাঁরা জানান, মসজিদ ও মন্দিরের মধ্যে তাঁরা কোনো পার্থক্য দেখেন না। ইমরানা বলেন, ‘আমি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি তুলে ধরতে চাই। আমি বিশ্বকে এই বার্তা দিকে চাই আমরা সবাই এক। আমরা একসঙ্গে থাকব।’ জীবাণুনাশকের কাজ করতে গিয়ে মন্দিরের কোনো পুরোহিত তাঁদের বাধা দেননি বলেও জানান।
নবদুর্গা মন্দিরের পুরোহিত পণ্ডিত যোগেশ কৃষ্ণ এনডিটিভিকে বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য এ ধরনের পদক্ষেপকে আমরা সব সময় স্বাগত জানাই। আমাদের অবশ্যই একে অন্যকে সহায়তা করতে হবে। আমাদের ঘৃণা থেকে দূরে থাকতে হবে। একে অন্যকে ভালোবাসতে হবে। একে অন্যের শুভকামনা করতে হবে।’
ইমরানার স্বামী একজন পয়োনিষ্কাশনকর্মী। ইমরানা ও তাঁর স্বামী কারও এখন কোনো কাজ নেই। লকডাউনের কারণে জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের দুজনের পক্ষে।
বাসার কাজ ও সন্তানদের দেখাশোনার পরে ইমরানা এলাকাবাসীর কল্যাণে কাজ করেন। ইমরানা বলেন, ‘এই বিপজ্জনক রোগ সম্পর্কে মানুষ সচেতন। এ কারণে স্যানিটাইজেশন কাজ করতে গিয়ে আমাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। এই মহামারি আমাদের সবাইকে এক করেছে।’