ভারতের পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন গতকাল শুক্রবার শেষ হলো। সব দলই বলেছিল, এটি আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল। ফাইনাল আগামী এপ্রিল-মে মাসে। তাই ভারতের মানুষও তাকিয়ে আছে এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে।
১১ ডিসেম্বর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ থাকায় এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের কোনো আগাম বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হয়নি। গতকাল শেষ দফার নির্বাচনের পর ভারতের বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা, সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদপত্র বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। এতে যে আভাস পাওয়া গেছে, তাতে স্বস্তি পাননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কোনো রাজ্যেই ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নিশ্চিত জয়ের ইঙ্গিত মেলেনি।
এবার নির্বাচন হয়েছে ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা ও মিজোরাম রাজ্যে। নির্বাচন শুরু হয় গত ১২ নভেম্বর। মাওবাদী–অধ্যুষিত রাজ্য ছত্তিশগড় থেকে নির্বাচন শুরু হয়। দুই দফায় অনুষ্ঠিত হয় ছত্তিশগড়ের নির্বাচন। এই রাজ্যে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হয় ২০ নভেম্বর। মধ্যপ্রদেশ ও মিজোরামে অনুষ্ঠিত হয় ২৮ নভেম্বর আর রাজস্থান ও তেলেঙ্গানায় অনুষ্ঠিত হয় গতকাল ৭ ডিসেম্বর। এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে এখন বিজেপি মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে ক্ষমতায় আছে। কংগ্রেস আছে মিজোরামে এবং তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস) তেলেঙ্গানা রাজ্যে ক্ষমতায় আছে।
গতকাল শুক্রবার শেষ দফার নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর দেশজুড়ে বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে, রাজস্থানে বিজেপি ক্ষমতা হারাবে। আর মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সেখানে জিতেও যেতে পারে বিজেপি। আর তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস-টিডিপি (তেলেগু দেশম পার্টি) জোটকে হারিয়ে দিয়ে জিততে পারে টিআরএস। অন্যদিকে, মিজোরামেও ঠাঁই পাবে না বিজেপি। সেখানে আঞ্চলিক দলের জোট হারিয়ে দিতে পারে কংগ্রেসকে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ফলাফল মোদির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে প্রমাণিত হয়, মোদির জনপ্রিয়তা কমছে। সে ক্ষেত্রে মোদিবিরোধীরা আরও শক্তিশালী হবে।
বুথ ফেরত সমীক্ষার আভাস
মধ্যপ্রদেশ: এই পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন রয়েছে মধ্যপ্রদেশে। আসনসংখ্যা ২৩০। এই রাজ্যে এখন ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। বুথফেরত সমীক্ষায় ইন্ডিয়া টুডে-এএমআই ইঙ্গিত দিয়েছে, ১০২ থেকে ১২০ আসনে জিততে পারে বিজেপি, কংগ্রেস জিততে পারে ১০৪ থেকে ১২২টি আসন। টাইমস নাউ-সিএনএক্স বলেছে, বিজেপি পেতে পারে ১২৬ এবং কংগ্রেস ৮৯। রিপাবলিক টিভি-জেকেবি বলেছে, বিজেপির ভাগ্যে জুটতে পারে ১০৮ থেকে ১২৮ আসন। আর কংগ্রেস পেতে পারে ৯৫ থেকে ১১৫। নিউজ নেশন বলেছে, বিজেপি পেতে পারে ১০৮ থেকে ১১২টি আর কংগ্রেস পেতে পারে ১০৫ থেকে ১০৯টি আসন। আর ইন্ডিয়া নিউজ-এমপি নেটা বলেছে, বিজেপি পেতে পারে ১০৬ আর কংগ্রেস পেতে পারে ১১২টি আসন।
রাজস্থান: এই রাজ্যের আসনসংখ্যা ২০০। ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। ইন্ডিয়া টুডে-এএমআই ইঙ্গিত দিয়েছে, বিজেপি পেতে পারে ৫৫ থেকে ৭২টি আসন আর কংগ্রেস পেতে পারে ১১৯ থেকে ১৪১টি আসন। টাইমস নাউ-সিএনএক্স বলেছে, বিজেপি পেতে পারে ৮৫, কংগ্রেস ১০৫টি। রিপাবলিক টিভি-জেকেবি বলেছে, বিজেপি পেতে পারে ৮৩ থেকে ১০৩। কংগ্রেস ৮১ থেকে ১০১। আর নিউজ নেশন বলেছে, বিজেপি পেতে পারে ৮৯ থেকে ৯৩ এবং কংগ্রেস পেতে পারে ৯৯ থেকে ১০৩টি আসন।
ছত্তিশগড়: আসনসংখ্যা ৯০। বর্তমান ক্ষমতায় বিজেপি। ইন্ডিয়া টুডে-এএমআই আভাস দিয়েছে, বিজেপি পেতে পারে ২১ থেকে ৩০। কংগ্রেস ৫৫ থেকে ৬৫। টাইমস নাউ-সিএনএক্স বলেছে, বিজেপি ৪৬, কংগ্রেস ৩৫। ইন্ডিয়া টিভি বলেছে, বিজেপি ৪২ থেকে ৫০, কংগ্রেস ৩২ থেকে ৩৮। নিউজ নেশন বলেছে, বিজেপি ৩৮ থেকে ৪২, কংগ্রেস ৪০ থেকে ৪৪। আর রিপাবলিক টিভি-সি-ভোটার বলেছে, বিজেপি পেতে পারে ৩৫ থেকে ৪০, কংগ্রেস ৪০ থেকে ৫০টি আসন।
তেলেঙ্গানা: অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে গঠিত হওয়া তেলেঙ্গানা রাজ্যে রয়েছে ১১৯টি আসন। ইন্ডিয়া টুডে-এএমআই বলেছে, টিআরএস পেতে পারে ৭৯ থেকে ৯১, কংগ্রেস-টিডিপি পেতে পারে ২১ থেকে ৩৩। বিজেপি পেতে পারে ১ থেকে ৩টি আসন। টাইমস নাউ-সিএনএক্স বলেছে, টিআরএস ৩৬, কংগ্রেস-টিডিপি ৩৭ এবং বিজেপি ৭টি আসন পেতে পারে। রিপাবলিক টিভি-জেকেবি বলেছে, টিআরএস পেতে পারে ৫০ থেকে ৬৫, কংগ্রেস-টিডিপি ৩৮ থেকে ৫২, বিজেপি ৪ থেকে ৭টি আসন। নিউজএক্স-নেটা ইঙ্গিত দিয়েছে, টিআরএস ৫৭, কংগ্রেস-টিডিপি ৪৬ এবং বিজেপি পেতে পারে ৬টি আসন।
মিজোরাম: উত্তর–পূর্ব ভারতের পাহাড়ি রাজ্য মিজোরাম। আসনসংখ্যা ৪০। এখানে এখন ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। এই রাজ্যে ভারতের জাতীয় দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে আঞ্চলিক দল। এই রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে বুথফেরত সমীক্ষা করেছে রিপাবলিক টিভি-সি-ভোটার। তাদের সমীক্ষায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, আঞ্চলিক দলের জোট এমএনএফ পেতে পারে ১৬ থেকে ২০টি আসন। অন্যদিকে কংগ্রেস পেতে পারে ১৪ থেকে ১৮টি আসন। এই রাজ্যে অবশ্য মুখোমুখি লড়াই হয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে আঞ্চলিক দলের জোটের। তাই এই রাজ্যে কংগ্রেস হারাতে পারে ক্ষমতা। যদিও কংগ্রেসের দাবি তারাই জিততে চলেছে।