ফোর্বসের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটির নাম জেফ বেজোস। ১১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক বেজোস সম্প্রতি তিন দিনের ভারত সফরে এসেছিলেন। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের জন্য সময় চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বেজোসকে ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি মোদি। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যই বেজোসের সঙ্গে দেখা করেননি। ফলে মোদির সঙ্গে দেখা না করেই ভারত ছাড়তে হয়েছে বিশ্বসেরা ধনী বেজোসকে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক মাস আগেই বেজোসকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মোদির পক্ষে তাঁর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হবে না। কিন্তু কেন বেজোসের সঙ্গে দেখা করলেন না মোদি? সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘বেজোসের সঙ্গে দেখা করার কোনো বাধ্যবাধকতা সরকারের নেই।’ বেজোসের মালিকানাধীন মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতি অসন্তোষের কারণে মন্ত্রিসভার কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি, এমনটাও বলছেন অনেকে।
অবশ্য সরকারের আরেকটি সূত্র ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছে, সম্প্রতি আমাজনকে ঘিরে বিতর্ক ছড়ানোর কারণেই বেজোসের সঙ্গে দেখা করেননি মোদি। গ্রাহকদের থেকে ‘প্রতারণামূলক দাম’ রাখা হচ্ছে, এমন অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আমাজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
এদিকে সফরে এসে ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে ১০০ কোটি ডলার (প্রায় ৭ হাজার ৯২ কোটি রুপি) বিনিয়োগ ও ১০ লাখ চাকরির সুযোগ তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন বেজোস। আজ শুক্রবার আমাজন ডট ইনে প্রকাশিত এক চিঠিতে বেজোস জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আমাজনের ব্যবসাকে কাজে লাগিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ভারতীয় পণ্য বিক্রি করতে চান তাঁরা। তাঁর দাবি, এই বিনিয়োগের কারণে ২০২৫ সালের মধ্যেই ভারতে ১০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। ভারত সফরে এসে মার্কিন এই ধনকুবের বলেছেন, ‘যতবারই ভারতে ফিরে আসি, আরও বেশি করে দেশটির প্রেমে পড়ে যাই। ভারতীয়দের কর্মশক্তি, উদ্ভাবন ও সাহসিকতা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।’
তবে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল দাবি করেছেন, বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করে বেজোস ভারতকে কোনো রকম অনুগ্রহ করছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার গয়াল বলেছেন, ‘হতে পারে তারা ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। কিন্তু যদি দেখা যায় যে প্রতিবছর তাদের কোটি কোটি ডলার লোকসান গুনতে হচ্ছে, তখন বাজার থেকে সেই অর্থ কীভাবে তুলে নিতে হবে, সেটিও কিন্তু তাদের অজানা নয়। সুতরাং এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে বিনিয়োগ করে তারা ভারতকে কোনো প্রকার অনুগ্রহ করছে।’
আমাজন ও ফ্লিপকার্টের প্রতি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বড় ছাড় দিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের বিপন্ন করে এই মার্কিন সংস্থাগুলো ভারতীয় আইন ভাঙছে। পীযূষ গয়াল সে প্রসঙ্গ তুলে বলেন, এ বিষয়ে প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।
এদিকে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সম্পাদকীয় নীতির প্রতি ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। বিজেপির বিদেশবিষয়ক বিভাগের প্রধান বিজয় চৌথিওয়ালে বলেছেন, ওই পত্রিকার ভারতবিষয়ক সংবাদ পরিবেশনা নিয়ে প্রচুর সমস্যা রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ওই সংবাদপত্রের নীতি অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট। বেজোসের মুখে ভারত বিষয়ে প্রশংসা শুনে তাঁর উদ্দেশে চৌথিওয়ালে বলেছেন, ‘আমি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাজনের সমালোচনা করছি না। এমনকি আমি নিজেও ওদের নিয়মিত গ্রাহক। কিন্তু ভারত সম্পর্কে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তাঁর উচিত দেশে ফিরে গিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টকে সেই একই কথাগুলো বলা।’
নরেন্দ্র মোদিকেও ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার সমালোচনা করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে নতুন নাগরিকত্ব বিলের কড়া সমালোচনা করে তাকে ‘বৈষম্যমূলক’ বলে দাবি করায় মার্কিন সংবাদপত্রটির ওপর বিরাগভাজন হন মোদি।