ভারতের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, বছর শেষে গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের ভোটে কংগ্রেসকে শূন্য হাতে ফিরতে হবে। রাজস্থানের উদয়পুরে তিন দিনের ‘চিন্তন শিবির’ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই এক টুইটে তিনি ওই মন্তব্য করেন। যদিও হিমাচল প্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। ফলে এই নির্বাচন প্রিয়াঙ্কার জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে হাজির হয়েছে।
আগামী বছর রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের ভোটে কংগ্রেসের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশান্ত কিশোর অবশ্য কোনো মন্তব্য করেননি। বিজেপি ওই দুই রাজ্য কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে মরিয়া। এই পরিস্থিতিতে প্রশান্ত কিশোরের একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুনীল কানুগোলু, গত মার্চে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে যিনি নির্বাচনী কৌশল স্থির করার দায়িত্ব পেয়েছেন, দলের পুনরুজ্জীবনে তিনি এক নীলনকশা তৈরি করেছেন, যার দুটি প্রস্তাব এই মুহূর্তে শীর্ষ নেতৃত্বকে যথেষ্ট ভাবাচ্ছে।
প্রস্তাব দুটির একটির লক্ষ্য বিজেপির হাত থেকে হিমাচল প্রদেশ ছিনিয়ে নেওয়া। সে জন্য ওই রাজ্যের নির্বাচনী দায়িত্ব প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাজস্থানে ক্ষমতা ধরে রাখতে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে কংগ্রেসের ‘ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট’ করে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হোক শচীন পাইলটকে।
হিমাচল প্রদেশ বিধানসভার ভোট চলতি বছরের নভেম্বরে, রাজস্থানের ভোট আগামী বছরের ডিসেম্বরে। এই এক বছরের মধ্যে দেশে ভোট হবে মোট ১১টি রাজ্যে।
প্রিয়াঙ্কাকে দায়িত্ব দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো হয়নি, যদিও ‘টিম প্রিয়াঙ্কা’ কাজ শুরু করে দিয়েছে। তিনি প্রধানত নির্ভর করছেন এই রাজ্যের এআইসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক রাজ্যসভা সদস্য রাজীব শুক্ল, তাঁর ঘনিষ্ঠ সন্দীপ সিং এবং এআইসিসির অন্তত ১০ জন সম্পাদকের ওপর। রাজ্যের মোট ৬৮টি বিধানসভা কেন্দ্র তাঁদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এই দল নিয়েই প্রিয়াঙ্কা উত্তর প্রদেশের ভোট লড়েছিলেন। প্রচারে সাড়া ফেললেও সাফল্য পাননি।
হিমাচল প্রদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তর প্রদেশের মতো জটিল নয়। এই রাজ্যের রাজনীতি এখনো বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে বিভাজিত। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এই রাজ্যে শাসক বদল হয়। একবার বিজেপি তো অন্যবার কংগ্রেস। সেই অঙ্কে এবার কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার পালা। রাজ্যের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনেও তার প্রতিফলন দেখা গেছে। তিনটি কেন্দ্রেই বিজেপিকে হারিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু এর পর থেকে তীব্র অভ্যন্তরীণ কোন্দল কংগ্রেসের সম্ভাবনাকে দিন দিন ক্ষীণ করে তুলছে। সেই সুযোগে রাজ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে আম আদমি পার্টি। ঘর গোছাতে বিজেপি চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পেলে প্রিয়াঙ্কা কতটা অবস্থার সামাল দিতে পারবেন, সেটা বড় প্রশ্ন।
রাজস্থান সম্পর্কে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট মোটেই আশাপ্রদ নয়। চিন্তন শিবিরের আয়োজন সত্ত্বেও মরুরাজ্যে কংগ্রেসে কলহ তীব্র। গোটা দল গেহলট ও পাইলট শিবিরে বিভক্ত। দেড় বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও শচীন অনুগামীদের জায়গা দিতে মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটাচ্ছেন না। চারবার মুখ্যমন্ত্রী হলেও যুব নেতৃত্বকে দায়িত্ব ছাড়তে অশোক গেহলটের তীব্র অনীহা। তিনি চান পুত্র বৈভবকে তুলে আনতে। কিন্তু ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে তিনি পুত্রকে জেতাতে পারেননি।
কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব জানে, দল ও সরকারে সম্মান না পেলে শচীনকে ধরে রাখা কঠিন হবে। আবার গেহলটকে অখুশি রেখে রাজ্যে কংগ্রেসকে জেতানো অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে দলের ‘ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট’ করার প্রস্তাব দিয়েছেন সুনীল কানুগোলু। তাঁর যুক্তি, গেহলটকে ‘ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট’ করা হলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির পরিবারতন্ত্রের অভিযোগও খণ্ডানো যাবে।
এআইসিসির এক সূত্র এই প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, শচীনকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তা এই বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরেই করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
আগস্টে কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন হওয়ার কথা। অশোক গেহলটকে তখনই ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। ওই সূত্রের মতে, নির্বাচনের ছয় মাস আগে পাঞ্জাবে মুখ্যমন্ত্রী বদলে কোনো লাভ হয়নি। ঘর গোছাতে শচীনকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। প্রস্তাব কার্যকর হলে শচীন এক বছরের বেশি সময় পাবেন।