বিজেপি নেতাদের বাঙালি হওয়ার পরামর্শ

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কেন্দ্রীয় নেতারা যে পোশাক পরে পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে আসেন, তা আদৌ এই বাংলার জন্য সাযুজ্য নয়। সেটা হিন্দি বলয়ের পোশাক। তাই দলকে চাঙা করতে বিজেপির নেতাদের খাঁটি বাঙালি সেজে বাংলায় প্রচারে আসার পরামর্শ দিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপিঘেঁষা কয়েকজন।

কলকাতায় বিজেপির রাজ্য কার্যালয়ে বিজ্ঞজনদের সঙ্গে এক বৈঠকে বসেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানেই বিজ্ঞজনেরা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এই পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, প্রয়োজনে তাঁদের ধুতি পরে এই রাজ্যে আসা উচিত।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিব প্রকাশ, বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়, রাহুল সিনহা প্রমুখ।

বৈঠকে বলা হয়, সংগঠনকে মজবুত করতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা যেভাবে এই রাজ্যে আসেন, সেটা এখানকার বাঙালি সমাজ পছন্দ করছে না। ফলে বাঙালি সমাজের আসল চাহিদা মেটানোর জন্য মমতা সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ায় এই রাজ্যে তৃণমূলের এত বাড়বাড়ন্ত। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা একটু যত্ন নিয়ে এই রাজ্যে প্রচারে এলে বিজেপি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে।

বিজ্ঞজনেরা বলেন, বিজেপির মন পেতে দলের নেতাদের বাঙালির পোশাক পরা উচিত। প্রয়োজনে তাঁরা ধুতি পরারও পরামর্শ দেন। বিজেপির একাংশের নিরামিষ খাওয়ার প্রচারকে তাঁরা মানছেন না। মাছ–ভাত খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতেই পারে না বাঙালিরা। তাই এসব চিন্তাভাবনা থেকে বিজেপিকে দূরে সরে আসতে হবে। খাঁটি বাঙালি হয়ে প্রচারে আসতে হবে এই রাজ্যে। এত দিন এই রাজ্যের অনেক মানুষ বিজেপিকে হিন্দি বলয়ের দল হিসেবে অভিহিত করত। এবার বিজেপির অন্দরেই এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন রাজনৈতিক শক্তির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু কিছুতেই ধারেকাছে যেতে পারছে না ১ নম্বর স্থানে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের। ফারাক আকাশ–পাতাল। তাই বিজেপিঘেঁষা পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞজন বা বুদ্ধিজীবীরা বিজেপিকে বাঙালি বাবু সাজার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় নেতারা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হালচাল পর্যালোচনা করে এখানকার বিজেপিঘেঁষা বুদ্ধিজীবীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন তাঁরা এগোতে পারছেন না। দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও প্রথম স্থানের সঙ্গে তাঁদের এত ফারাক কেন? এরপরই বিজেপিঘেঁষা বুদ্ধিজীবীরা পরামর্শ দেন, এই রাজ্যে দলকে শক্তিশালী করতে হলে খাঁটি বাঙালি হয়ে আসতে হবে। নেতাদের আরও বাঙালিয়ানায় সম্পৃক্ত হতে হবে। বাইরে থেকে অবাঙালি নেতাদের নয়, বরং রাজ্য থেকে বাঙালি নেতাদের নেতৃত্বদানের জন্য বেছে নিতে হবে। তাঁরা আরও বলেছেন, একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে এই রাজ্যের বাঙালিদের। দেখা গেছে, এই রাজ্যে প্রচুর প্রতিভাসম্পন্ন বাঙালি থাকলেও বেছে নেওয়া হয় ভিন্ন রাজ্যের বাঙালিদের। এই প্রবণতার নিরসন করতে হবে। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, কেন্দ্রীয় নিয়োগে কেন ভিনরাজ্যের বাঙালিদের বাছা হয়? এই দ্বিচারিতা বন্ধ করতে হবে বিজেপিকে।