বাংলাদেশের জন্য আদানির বিদ্যুৎলাইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মুর্শিদাবাদে

বিদ্যুৎ
প্রতীকী ছবি

ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য পরিকাঠামো বানাচ্ছে দেশটির অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহকারী আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সংস্থা আদানি পাওয়ার। এরা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কায় পরিকাঠামো বানাচ্ছে। সেখানকার কর্মী ও অফিসারের গত শনিবার বড় বাধার মুখে পড়েন। গতকাল রোববারও ওই অঞ্চলে উত্তেজনা রয়েছে।

গ্রামের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের হাইটেনশন লাইন নেওয়া যাবে না বলে দাবি করে ফারাক্কার বেনিয়াগ্রাম ও ইমামনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীরা কাজ বন্ধ করে দেন। বিক্ষোভকারীরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। ফলে তাঁরা কাজ করতে দেবেন না। বিক্ষোভের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে।

২০১৬ সালে আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলা থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে হবে। ঝাড়খন্ডের এই বিদ্যুৎ প্রকল্পকে ‘আলট্রাসুপার ক্রিটিকাল কোল-বেসড পাওয়ার প্ল্যান্ট’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর অর্থ, কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে যে পানি ব্যবহার করা হয়, তা বিশেষ ধরনের জলীয় পদার্থ যা তরলও নয়, আবার গ্যাসও নয়। গোড্ডা থেকে এই বিশেষ বিদ্যুৎ ফারাক্কাসহ উত্তর পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যাবে।

মুর্শিদাবাদের দুটি গ্রাম জাফরগঞ্জ ও দাদনটোলায় আমবাগান ও বসতবাড়ির ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ পরিচালনার তার নেওয়ার সময় গ্রামবাসীরা আপত্তি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে মৌখিক বিবাদ এবং পরে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তা ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, বিদ্যুতের তার জমির ওপর দিয়ে নিয়ে গেলেও তাঁদের জানানো হয়নি। পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা বলেন, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত বিদ্যুতের তার নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন।

বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফারাক্কা থানার পুলিশ।

গ্রামবাসীর বক্তব্য, পুলিশ অযথা লাঠিপেটা করায় নারীসহ একাধিক গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়, কথা–কাটিকাটির একপর্যায়ে তাঁদের ওপর হামলা চালায় গ্রামবাসীর একাংশ। প্রথমে তাঁদেরই লাঠি নিয়ে আক্রমণ করা হয় এবং পরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। এরপর লাঠি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ।

বিক্ষোভের খবর পেয়ে হাজির হন স্থানীয় জেলা পরিষদ ও যুব কংগ্রেস সদস্য আসিফ ইকবাল। পুলিশ তাঁর জামা ছিঁড়ে ফেলে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

আসিফ ইকবাল স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, হাইকোর্টে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হবে। বিদ্যুতের তার বসতবাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে আর দোতলা বাড়ি করা যাবে না। ফলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

কিন্তু আদানি গোষ্ঠী শুধু যেখানে তাদের টাওয়ার বসেছে, সেখানেই ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। যেখান দিয়ে বিদ্যুতের তার যাচ্ছে, সেই জমির জন্য ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। আম ও লিচুবাগানের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার গেলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশও জবরদস্তি করছে বলে আসিফ ইকবালের অভিযোগ। আসিফকে আহত করায় পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করেছেন রাজ্য যুব কংগ্রেস সভাপতি সাদাব খান।

এখন পর্যন্ত আদানি পাওয়ারের কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

কয়েক বছর আগে ২০১৭ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ে প্রায় একই ধরনের আন্দোলনে নেমেছিলেন সেখানকার চাষি ও বাসিন্দারা। সেখানে জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। আন্দোলন শুরু হয় এবং কয়েকজন মারা যান, কাজ পিছিয়ে যায়।