আসামের বরাক উপত্যকার শিলচরসহ বিভিন্ন জায়গায় আজ রোববার পালিত হচ্ছে ভাষাশহীদ দিবস। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা আগে এবারের ১৯ মে শিলচরে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এদিনই বাঙালিদের দুর্ভোগের কারণে মানববন্ধনেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।
ভারতের সাত দফার লোকসভা নির্বাচন শেষ হচ্ছে আজ। ভোট গণনা ২৩ মে। তবে আজই বিভিন্ন চ্যানেলে আভাস মিলতে পারে নরেন্দ্র মোদির প্রত্যাবর্তন, নাকি রাহুল গান্ধীর অভিষেক হতে চলেছে দিল্লির মসনদে। তাই গোটা ভারতেই উত্তেজনা তুঙ্গে।
আসামেও উত্তেজনা কম নেই। কারণ, এখানে বিজেপির আমলে বাঙালিকে নির্মূল করার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে সুশীল সমাজ থেকেই। তাই অনেকেই মনে করছেন, এবারের নির্বাচনের মতো ১৯ মেও বাঙালি জাতির কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
শিলচর থেকে আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির সভাপতি সাধন পুরকায়স্থ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, একদিকে এনআরসির (নাগরিক নিবন্ধন) মাধ্যমে বাঙালিদের গায়ে ‘বাংলাদেশি’ তকমা লাগানোর চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে ক্যাবের (নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল) নামে বাঙালি জাতিকে দুভাগে ভাগ করার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র চলছে। তাই এবারের ১৯ মে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
১৯৬১ সালে আসামের বাংলাভাষী বরাক উপত্যকার শিলচরে মাতৃভাষা বাংলার সরকারি স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলনরত ব্যক্তিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। মোট ১১ জন শহীদ হন শিলচর রেলস্টেশনে। রক্তের বিনিময়ে বরাকেও প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা ভাষার স্বীকৃতি।
প্রতিবারের মতো এবারও দিনটি পালিত হচ্ছে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে। আজ সকালে শিলচর রেলস্টেশনে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন আসামের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্ল বৈদ্য, মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী তথা স্থানীয় সাংসদ সুস্মিতা দেব, ভারত সরকারের সাবেক মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, স্থানীয় বিধায়ক দিলীপ পাল, পুরসভার চেয়ারম্যান নীহারেন্দ্র রায় ঠাকুর প্রমুখ।
রেলস্টেশনের পাশাপাশি শিলচর মহাশ্মশানে ভাষাশহীদদের শহীদ বেদি ও গান্ধীঘাটে তাঁদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার মানুষ।
দলমত-নির্বিশেষে সবাই শ্রদ্ধা জানান ভাষাশহীদদের। দিনভর আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। রয়েছে বিক্ষোভ কর্মসূচিও।
আসামের বিভিন্ন বিদেশি বন্দিশালায় (জেলখানায়) বাংলাদেশি সন্দেহে বন্দী রয়েছেন বহু বাঙালি। সেই সঙ্গে এনআরসির নামেও রয়েছে বাঙালিদের হয়রানির অভিযোগ। এর প্রতিবাদে আজ মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্যের মতে, বাঙালি জাতিকে নির্মূল করার ষড়যন্ত্র চলছে। প্রথম আলোকে তপোধীর বলেন, ‘হিন্দি, হিন্দু ও হিন্দুস্থান নীতিকে কার্যকর করতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার বাঙালি জাতিকে নির্মূল করা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই ঘুম থেকে জেগে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বাঙালিদের। নইলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’