পেগাসাস প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফোনে অবৈধভাবে আড়ি পাতার তদন্তে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দিলেন। এ বিষয়ে সরকারের কোনো ওজর আপত্তি আমল দেওয়া হলো না। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা আজ বুধবার এ জনস্বার্থ মামলার রায় দিয়ে বলেন, অন্যায়ভাবে আড়ি পাতার অভিযোগ সত্য হলে তা মৌলিক অধিকার খর্বের শামিল, যার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক।
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর ভি রবীন্দ্রন ওই বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান। তাঁকে সহায়তা করবেন একজন আইপিএস কর্মকর্তা ও চার ফরেনসিক, কম্পিউটার, প্রযুক্তিবিদ বিশেষজ্ঞ। কমিটিকে দ্রুত তদন্ত শেষ করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি দুই মাস পর।
ইসরায়েলের এনএসওর তৈরি পেগাসাস প্রযুক্তির সাহায্যে ভারত সরকার সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতাসহ বহু সাধারণ মানুষের ফোনে আড়ি পেতেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দুই বছর আগে, ২০১৯ সালে এই অভিযোগ প্রথমবার ওঠার পর সরকার সংসদে জানিয়েছিল, আইনবহির্ভূত কিছু করা হয়নি।
সম্প্রতি বিশ্বের প্রথম সারির ১৬টি দেশের সাংবাদিকদের এক সংগঠন তদন্ত শেষে জানায়, কীভাবে বিভিন্ন দেশের সরকার এই প্রযুক্তির সাহায্যে সাধারণ নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে ভারতের অনেক বিচারপতি, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, সমাজসেবী, রাজনৈতিক নেতার নাম উল্লেখ করা হয়, যাঁদের ফোনে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে। এই প্রতিবেদন জানাজানি হওয়ার পর বিভিন্ন সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা, এডিটরস গিল্ডের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে বলা হয়, সর্বোচ্চ আদালত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন। তদন্তের নির্দেশ দিন।
সেই আবেদনে সাড়া দেওয়ার আগে সুপ্রিম কোর্ট ভারত সরকারকে অভিযোগ অস্বীকার করার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার বারবার বলেছে, আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করা হয়নি। সরকার যে পেগাসাস প্রযুক্তি কিনেছে, তা–ও স্পষ্ট করে বলেনি। শুনানির সময় শুধু বলেছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তা বলা যাবে না। কেননা, তাতে সন্ত্রাসীদের সাহায্য করা হবে। অভিযোগের সারবত্তা খতিয়ে দেখতে সরকার নিজে থেকে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ার প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্টকে দিয়েছিল। সর্বোচ্চ আদালত তা–ও মানেননি। আজ সেই প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারকে অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা ভাসা ভাসা অস্বীকার ছাড়া কিছুই বলতে পারেনি। বারবার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে পার পাওয়া যায় না। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আদালত হস্তক্ষেপ করতে চান না। কিন্তু তাই বলে নীরব দর্শক সেজেও থাকতে পারেন না। প্রধান বিচারপতি এ কথাও বলেন, সরকারকে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের অনুমতি দিলে তা ন্যায়বিচারের নীতির পরিপন্থী হতো।
প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা, বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ এই প্রসঙ্গে নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার প্রসঙ্গেও মন্তব্য করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেন, শুধু রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিক নন, গোপনীয়তার অধিকার রয়েছে প্রত্যেকের। সেই অধিকার রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। গোপনীয়তার অধিকারে কোনো কোনো সময় রাশ টানা হতে পারে। কিন্তু সরকারের সেই অধিকার সাংবিধানিক বৈধতার ঊর্ধ্বে নয়। এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার সংবাদমাধ্যমের অধিকারের ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে সরকারকে আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরযেওয়ালা আজ টুইট করে বলেন, ‘সর্বত্রই ছদ্ম জাতীয়তাবাদ স্বৈরতন্ত্রীদের শেষ আশ্রয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানাই। যদিও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মোদি সরকার দৃষ্টি ঘোরানোর বৃথা চেষ্টা করেছে। সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবী।’