পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। গত ২২ বছরে তিনি সাতজনকে হত্যা করেছেন। যার সবগুলোই পরকীয়া প্রেম-সংক্রান্ত ঘটনার জেরে ঘটেছে। ওই অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কয়েকজন নারীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তিনি তাঁদের স্বামীদের হত্যা করেন। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড তিনি ঘটিয়েছেন। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে জাগরুপ সিং (৪৭) নামের এমনই এক ক্রমিক খুনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার অভিযান চালিয়ে হরিয়ানা রাজ্যের পাতিয়ালা থেকে ক্রমিক খুনি জাগরুপ সিংকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, জাগরুপ গত ২২ বছরে হরিয়ানার পাতিয়ালা, লুধিয়ানা, পাঞ্জাব ও যমুনা নগরে অন্তত সাতটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তাঁর বাড়ি লুধিয়ানা জেলার বসতি বাদলোয়াল এলাকায়। তিনি পেশায় একজন অটোরিকশাচালক। ২০০৪ ও ২০১১ সালে তিনি তাঁর দুই প্রেমিকার স্বামীকে হত্যা করেন।
পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার জাগরুপ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৯৫ সালে তিনি প্রথমবারের মতো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩০ ডিসেম্বর পাতিয়ালার মডেল টাউন এলাকায় রাজেন্দর সিং (৪৩) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার তদন্তে নেমে জাগরুপের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় পুলিশ। পরে গতকাল তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পাতিয়ালা রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সুখচান জিল বলেন, রাজেন্দর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে জাগরুপের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় পুলিশ। জাগরুপের ধারণা ছিল, তাঁর প্রেমিকা হেমার (৪৩) সঙ্গে রাজেন্দরের সম্পর্ক রয়েছে। এর জেরেই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে হেমাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি।
সুখচান জিল বলেন, রাজেন্দরের সঙ্গে জাগরুপের সুসম্পর্ক ছিল। গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করেন। রাজেন্দরের গ্লাসে চেতনানাশক মিশিয়ে দেন তিনি। পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে হত্যা করেন।
পুলিশ জানায়, রাজেন্দরকে হত্যা করে আবারও লুধিয়ানা ফিরে যান জাগরুপ। কিন্তু সিসি ক্যামেরায় জাগরুপকে স্পষ্ট দেখা যায়। এর ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সুখচান জিল বলেন, জাগরুপ স্বীকার করেছেন, ১৯৯৫ সালে লুধিয়ানার শিমলাপুরি এলাকায় ডাকাতি করার সময় প্রথমবারের মতো এক নারীকে তিনি হত্যা করেন। সে সময় তাঁর এক সহযোগী ছিলেন। ১৯৯৮ সালে বারোয়াল এলাকায় তিনি আরও এক নারীকে হত্যা করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০০৪ সালে হরিয়ানার পরমজিৎ কৌর নামের এক নারীর সঙ্গে জাগরুপের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর সূত্র ধরে ওই বছর পরমজিতের স্বামী কুলদীপ সিংকে হত্যা করেন জাগরুপ। কুলদীপের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ একটি ট্রাঙ্কে ঢুকিয়ে যমুনা নদীতে ফেলে দেন তিনি। ২০১১ সালে লুধিয়ানার হেমা নামের আরেক নারীর সঙ্গে তাঁর অবৈধ সম্পর্ক হয়। হেমা এখন পাতিয়ালায় থাকেন। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য ওই বছর হেমার স্বামী নন্দলালকে কাকোয়াল গ্রামে হত্যা করেন। এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি হেমা তাঁকে সহযোগিতা করেন। পরে তাঁরা দুজন মিলে নন্দলালের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ একটি খালি মাঠে আবর্জনার স্তূপে ফেলে দেন। ২০১৫ সালের মে মাসে সাবেক প্রেমিকা পরমজিতের সঙ্গে তাঁর আবারও সম্পর্ক হয়। পরে তাঁর সহযোগিতায় পাতিয়ালার অনিল কুমার নামের ব্যক্তিকে হত্যা করেন জাগরুপ। অনিলের লাশ ব্রিফকেসে ভরে তা বিকাশনগরে ফেলে দেওয়া হয়। পরমজিৎ ও অনিল যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু বেশ কয়েকবার অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার কারণে জাগরুপকে দিয়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন পরমজিৎ।
এর এক বছর পর ২০১৬ সালে জাগরুপ ও হেমার প্রেমের বিষয়টি জানতে পারেন পরমজিৎ। এ নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। পরে জাগরুপ ও হেমা লুধিয়ানার দেহলন এলাকায় কৌশলে পরমজিৎকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ওই বছরের এপ্রিলে পুলিশ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করে।
পুলিশ আরও জানায়, হেমাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে গ্রেপ্তার জাগরুপ ও হেমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে।