বিদেশ থেকে ফিরে ফেব্রুয়ারির গোড়াতেই দলের দায়িত্ব নিতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। এর আগে প্রয়াগরাজে (পূর্বতন এলাহাবাদ) কুম্ভ মেলায় ‘মৌনি অমাবস্যার’ পুণ্যতিথিতে সংগমে তিনি স্নান করবেন।
সংবাদ সংস্থা আইএএনএস শনিবার এই খবর জানিয়েছে। তাদের খবর অনুযায়ী, কুম্ভ মেলায় স্নান সারার পর প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর বড় ভাই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌয়ে একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করবেন।
রাহুল-প্রিয়াঙ্কার মা সোনিয়া গান্ধী ২০০১ সালে কুম্ভ মেলায় স্নান করেছিলেন। আইএএনএস জানাচ্ছে, কোনো কারণে ‘মৌনি অমাবস্যায়’ স্নান করতে না পারলে প্রিয়াঙ্কা ও রাহুল বসন্ত পঞ্চমীতে তৃতীয় শাহি স্নানে অংশ নেবেন। এক মাস ধরে প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সংগমস্থলে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ভোটের সময় কংগ্রেসের রাজনীতিতে অল্প-বিস্তর জড়িত থাকলেও সম্প্রতি প্রিয়াঙ্কা আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছেন। তাঁকে দেওয়া হয়েছে উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের পূর্ণ দায়িত্ব। রাজ্যের ৮০টি লোকসভার আসনের মধ্যে প্রিয়াঙ্কার দায়িত্বে পড়ছে পূর্বাঞ্চলের ৪২টি কেন্দ্রে। এই অঞ্চলেই পড়ছে রাহুলের আমেথি, সোনিয়া গান্ধীর রায়বেরিলি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বারানসি এবং রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গোরক্ষপুর। উত্তর প্রদেশের বাকি অঞ্চলের দায়িত্বে আনা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের যুবনেতা সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে।
উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) জোট গঠনের পর তিন দিন আগে প্রিয়াঙ্কার নতুন দায়িত্বের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়। এই ঘোষণা দেশের রাজনীতিকে চনমনে করে তুলেছে। নানা মহলে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ নিয়ে জল্পনা। কংগ্রেসও উজ্জীবিত। বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস নেতৃত্ব নতুন কর্মসূচি নিতে শুরু করেছে। সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশের সর্বত্র কংগ্রেসিদের মধ্যে নতুন আশাও সঞ্চারিত হয়েছে। লক্ষ্ণৌয়ে কংগ্রেস সদর দপ্তরে সাজসাজ রব। প্রিয়াঙ্কার জন্য নির্দিষ্ট করা হচ্ছে একটি কক্ষ।
প্রিয়াঙ্কা এর আগে আমেথি ও রায়বেরিলিতে ভোটের সময় প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিত এই দুই কেন্দ্রের বাইরে তিনি কখনো কোনো দায়িত্ব নেননি। রাহুল গান্ধী ওডিশায় বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত মোটিই তড়িঘড়ি নেওয়া নয়। অনেক দিন থেকেই বিষয়টি পরিবারে আলোচিত হচ্ছিল। কিন্তু সন্তানদের কারণে পুরোদমে রাজনীতিতে আসা তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। সেই বাধা এখন নেই। তারা (সন্তান) বড় হয়ে গেছে।
কংগ্রেসে সাংগঠনিক দায়িত্ব নিলেও লোকসভার আসন্ন নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হচ্ছেন কি না, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। স্বাস্থ্যের কারণে রায়বেরিলি থেকে সোনিয়া এবার আর ভোটে দাঁড়াবেন না, এমন একটা প্রচার কংগ্রেসে রয়েছে। সেই জায়গায় প্রিয়াঙ্কা আসবেন কি না, সেই প্রশ্ন রাহুলকে করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, সেটা পুরোপুরি প্রিয়াঙ্কার ওপর নির্ভর করছে।
রাহুল বলেছেন, উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস তার মতো করে লড়াই করবে। উজ্জীবিত কংগ্রেস কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল বিজেপিকে চিন্তায় ফেলেছে। উচ্চবর্ণের ভোট কংগ্রেসের দিকে কিছুটা ফিরে এলে তাতে বিজেপির ক্ষতি। কিন্তু দলিত ও মুসলমান ভোট কংগ্রেসের দিকে চলে এলে তাতে ক্ষতি বিএসপি ও এসপির। এদিকে তিন দলেরই লক্ষ্য অভিন্ন—বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করা। এখন দেখার, প্রিয়াঙ্কার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই লক্ষ্য পূরণে উত্তর প্রদেশে এসপি-বিএসপির সঙ্গে কংগ্রেসের নতুনভাবে কোনো সমঝোতা হয় কি না।