কলকাতায় সিএএ–বিরোধী এক সমাবেশে যোগ দেওয়ায় কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্যান্ডের এক ছাত্রকে ভারত ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিল দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে পোল্যান্ডের ছাত্র কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করেন। তিনি ওই নির্দেশ পুনর্বিবেচনা করে তাঁকে ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়ার আবেদন জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দিনের শুনানির পর কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর দেশ ছাড়ার নোটিশের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ১৮ মার্চ চূড়ান্ত রায় দেওয়ার তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সময়ে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পোল্যান্ডের ওই ছাত্রের নাম কামিল শেদচিনস্কি। এর আগে তাঁকে ১৫ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নোটিশ দেন কলকাতার এফআরআরও বা বৈদেশিক নাগরিক আঞ্চলিক রেজিস্ট্রেশন অফিস। কামিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের ছাত্র। তিনি বাংলা ভাষায় পারদর্শী। বাংলা ভাষা নিয়ে বিশ্বভারতীতেও পড়ছেন তিনি। ২০১৭ সাল থেকে ভারতে পড়াশোনা করছেন। শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এর আগে সংস্কৃতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
কামিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর কলকাতার শিয়ালদহের কাছে রামলীলা ময়দানে সিএএ–বিরোধী এক সমাবেশে যোগ দেন। সেখানে তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সাক্ষাৎকার একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হওয়ার পর সরকারের দৃষ্টিতে আসে কামিলের নাম। ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ডাকা হয় কলকাতার ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে (এফআরআরও)। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এই অফিসের কর্মকর্তারা। তাঁর তোলা ছবি জমা দেন কামিল। এরপরই কামিলকে ১৫ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়ার নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতীম রায় বলেছিলেন, কামিলকে সম্প্রতি দেশ ছাড়ার নোটিশ পাঠিয়েছে এফআরআরও। তবে যতটুকু মনে হয়েছে, কামিল নেহাত কৌতূহলবশত সমাবেশ দেখতে গিয়েছিলেন।
এরপরই মঙ্গলবার কামিল ওই নির্দেশকে পুনর্বিবেচনা ও ভারতে থাকার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সেই আবেদনের শুনানি গ্রহণ করেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে সরকারি আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। তিনি বলেন, ওই ছাত্রের সিএএ–বিরোধী সমাবেশে যোগ দেওয়া অন্যায়। তিনি ভারতের নাগরিক নন। তাই তাঁর বাকস্বাধীনতার অধিকার খাটে না। ভারতের সংসদে পাস হওয়া আইনের বিরুদ্ধে তিনি কোনো সমাবেশে যোগ দিতে পারেন না। তিনি ওই সমাবেশে যোগ দিয়ে ভারতের ভিসা–বিধি লঙ্ঘন করেন।